রাজধানীতে চার বছরে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি

সকালের ভারী বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে পড়ে নগরবাসী। মিরপুর, ঢাকা, ১ জুন
ছবি: আশরাফুল আলম

বর্ষা আসতে এখনো দিন দশেক বাকি। বর্ষার উৎস মৌসুমি বায়ু কেবল বঙ্গোপসাগরের শেষ সীমানা আন্দামান দ্বীপ পার হয়েছে। এর আগেই রাজধানী ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম—সবখানেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে নয়টার মধ্যেই রাজধানীতে ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সকাল নয়টার পর সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত আরও তিন মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রামেও বৃষ্টি কম হয়নি। দেশের সর্বোচ্চ ১৬১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে সেখানে।

ঢাকায় আজকের বৃষ্টি ছিল গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৭ সালের ১২ জুন রাজধানীতে ১৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। এই চার বছরের মধ্যে আজ মঙ্গলবার সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। আগের বছরগুলোতে এমন বৃষ্টি হয়েছে মূলত বর্ষায়। বর্ষার আগে এমন বৃষ্টির রেকর্ড খুব একটা নেই। এই সময়ে এত বৃষ্টি একটু অস্বাভাবিকই বলছেন আবহাওয়াবিদেরা।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, কাল বুধবার তো বটেই, আগামী চার–পাঁচ দিন থেমে থেমে বৃষ্টি চলতে পারে। হঠাৎ প্রচুর বৃষ্টি হয়ে থেমে গেলেও দিনের বেশির ভাগ সময় আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। সেই সঙ্গে বজ্রপাতেরও আশঙ্কা রয়েছে।

একে জলাবদ্ধতা, আবার সড়কও এবড়োখেবড়ো। এর মধ্যে যাত্রীসহ রিকশা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চালক। উদ্ধার পান দুই পথচারীর সহায়তায়। আজ সকালের বৃষ্টিতে পুরান ঢাকার এ সড়কের মতো বিভিন্ন অলিগলি পানিতে তলিয়ে যায়। আজ দুপুরে সিদ্দিক বাজার এলাকায়
ছবি: দীপু মালাকার

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, স্বাধীনতার পর ঢাকায় ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হচ্ছে ২০০৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বরে। সেদিন দিনের প্রথম ভাগের মধ্যে ৩৪১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। আর ২০০৯ সালের ২৮ জুলাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয় ৩৩৩ মিলিমিটার। এরপর বেশ কবার ২০০ মিলিমিটারের ওপরে বৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, মূলত পশ্চিমা লঘুচাপের কারণে এই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক দিন এই বৃষ্টি চলবে। এরপর কয়েক দিন বিরতি দিয়ে ১০ থেকে ১২ জুনের মধ্যে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশ করলে আবারও বৃষ্টি বাড়বে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, বর্ষা নামার আগের এই বৃষ্টির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর পানি বেশ ঠান্ডা হয়। আর এর সঙ্গে প্রচুর বজ্রপাত হয়। কিন্তু বর্ষার বৃষ্টির পানির ফোঁটা বড় হয় এবং পানি কিছুটা উষ্ণ থাকে। আর বর্ষার বৃষ্টি সাধারণত টানা ঝরতে থাকে। কিন্তু পশ্চিমা লঘুচাপের কারণে নামা বৃষ্টি কয়েক ঘণ্টার বেশি থাকে না।

আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, চার মাস ধরে বৃষ্টি স্বাভাবিকের চেয়ে কম হওয়ায় আবহাওয়া শুষ্ক অবস্থায় আছে। ফলে পশ্চিমা লঘুচাপের কারণে বাতাসে জলীয় বাষ্প বেড়ে যাওয়ায় প্রচুর মেঘ তৈরি হয়েছে। আর ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে বঙ্গোপসাগর থেকে উড়ে আসা প্রচুর মেঘ বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় উড়ে বেড়াচ্ছে। এসব কারণে হঠাৎ বৃষ্টি বেড়ে গেছে।

এদিকে বৃষ্টির কারণে রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ বড় শহরে তীব্র জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। সকালের পর আর খুব একটা বৃষ্টি না থাকলেও আকাশ সারা দিন ছিল মেঘলা। সড়কজুড়ে জমে থাকা বৃষ্টির পানি অনেক স্থানে দুপুর, এমনকি বিকেল পর্যন্ত ছিল।

বৃষ্টির কারণে রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলের তাপমাত্রা এক লাফে ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যায়। কালও দেশের বেশির ভাগ এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দিন ও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বৃষ্টির কারণে দেশের বেশির ভাগ এলাকা থেকে তীব্র দাবদাহ কমে গেছে।