বৃষ্টি হলেও ভ্যাপসা গরম কেন?
ছুটির দিনে বৃষ্টিভেজা সকাল ছিল আজ। যাঁরা বর্ষা নিয়ে রোমান্টিসিজমে ভোগেন না, তাঁদের কাছেও ছুটির দিনে বৃষ্টিভেজা সকাল দেখতে খারাপ লাগে না। কারণ, বৃষ্টির মধ্যে পানি ভেঙে (কোনো কোনো এলাকার জন্য প্রযোজ্য), কাদায় জুতা মাখামাখি করে, অন্য দিনের চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েও দেরিতে কর্মস্থলে পৌঁছানোর বিরক্তির মধ্যে পড়তে হয় না। তবে থেমে থেমে ঝিরঝিরে বৃষ্টি হলেও ভ্যাপসা গরম কমেনি। আবহাওয়াবিদ বলছেন, জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি এবং বাতাসের গতিবেগ কিছুটা কম হওয়ার কারণে এমন গরম অনুভূত হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সারা দেশের তাপমাত্রা ৩২ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। এর মধ্যে সারা দেশেই এক-দুই পশলা বৃষ্টি হয়েছে।
এরপরও ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে কেন, জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, এখন জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি এবং বাতাসের গতিবেগ কিছুটা কম। ঢাকায় বাতাসের বেগ প্রতি ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার। এ কারণে বৃষ্টি হলেও ভ্যাপসা গরম লাগছে এবং স্যাঁতসেঁতে অনুভূত হচ্ছে। তাপমাত্রা যা আছে, তার চেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে। সাধারণত ৩২ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এত গরম লাগার কথা নয়।
তবে আজ রবি ঠাকুরের ‘আকাশ-ভাঙা আকুলধারা কোথাও না ধরে’ ধরনের বৃষ্টি নয়। সকালে থেমে থেমে ঝিরঝিরে বৃষ্টি হয়েছে সারা দেশে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সারা দিনই থেমে থেমে চলবে এমন বৃষ্টি। তাই কিছুটা গরম হলেও বৃষ্টিপ্রেমীদের মতো আজ এই ঘরানার মানুষও ঘুম ঘুম চোখে জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখা বা এক কাপ চা হাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টির ছন্দ শোনা এবং বৃষ্টির সঙ্গে মিলিয়ে দিনের খাবারের মেনু তৈরির রেওয়াজে মিশে যেতে পারেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সকালের বৃষ্টি বর্ষাকালের স্বাভাবিক বৃষ্টি। এমন থেমে থেমে বৃষ্টি ১৫ আগস্ট পর্যন্ত থাকবে সারা দেশে। ১৬ আগস্ট সারা দেশে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা বাড়বে। আজ ঢাকায় সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় ১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক আজ সকালে প্রথম আলোকে জানান, মৌসুমি বায়ু মোটামুটি সক্রিয় থাকার কারণে সারা দেশেই আজ থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। এ সময় বাতাসে জলীয় বাষ্প ৯০ থেকে ১০০ শতাংশের মধ্যে ওঠা-নামা করে। এই মাত্রায় জলীয় বাষ্প যদি বায়ুমণ্ডলে থাকে, তাহলে জলীয় বাষ্পের ঊর্ধ্বগমন ঘটে এবং জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে সারি সারি মেঘমালা তৈরি করে। এই মেঘমালা কোনো অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলে বৃষ্টি হয়। আর এই মেঘমালার মধ্যে দূরত্ব থাকলে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়।
এই আবহাওয়াবিদ আরও জানান, এটা বর্ষাকালের স্বাভাবিক বৃষ্টি। বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ নেই। কোনো নিম্নচাপ নেই, তাই কোনো সতর্কতা সংকেত দেওয়া হয়নি। তবে দেশের বড় বড় নদীতে বাতাস বাধাহীনভাবে প্রবাহিত হওয়ায় দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া রয়েছে। এ কারণে অভ্যন্তরীণ নৌপথে নৌযানগুলোকে ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বেশি বৃষ্টি বরিশালে
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে আজ সকাল ছয়টা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে বরিশালে, ৬৩ মিলিমিটার। সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে চট্টগ্রামে, ১৬ মিলিমিটার। এ ছাড়া রাজশাহীতে ৪৩, খুলনায় ৪১, রংপুরে ৩৪, ঢাকায় ২৫, সিলেটে ২১ এবং ময়মনসিংহে ১৮ মিলিমিটার।