ফণীমনসা

ফণীমনসার ফুল, মংলা থেকে তোলা ছবি l লেখক
ফণীমনসার ফুল, মংলা থেকে তোলা ছবি l লেখক

তপ্ত রোদ। আকাশে জ্বলে নিষ্করুণ সূর্য। বৃষ্টি নেই। ফুলের মঞ্জরি তাপে কুঁকড়ে যায়। তারপরও বাতাসে ভাসে বনফুল কুরচি ও বনআসরার সুবাস। এ দুই বনফুল আমাদের পাহাড়ি বনে আছে। গ্রামের নিসর্গে আলো ছড়ায় জারুল ও সোনালু। বনের পাখিরা খুঁজে ফেরে সুশীতল ছায়া। বটের ফল পেকে আরও রঙিন হয়। কোকিল, হরিয়াল, শেকরা বসন্ত বটের পাতার আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে পাকা ফল খায়। এই রৌদ্ররূপ প্রকৃতির মধ্যে ঢাকা শহরের পথে পথে এখন হলুদ ফুল বেশি দৃশ্যমান। সম্প্রতি গ্রামের এক পথে দেখলাম ফণীমনসার ফুল। বহুবার দেখেছি এ উদ্ভিদ, কিন্তু এবারই প্রথম ফুলের দেখা পেলাম। শহর এলাকার ফণীমনসায় ফুল সহজে ধরে না। সম্প্রতি গ্রীষ্মের এক সকালে মংলার ভাগা বাজার ছাড়িয়ে যেতেই সড়কের দুপাশে অঢেল ফণীমনসার ঝোপ দেখলাম। প্রায় সব ঝোপেই কলি এসেছে। কোনোটিতে ধরেছে ফুল। গ্রীষ্মের এ তপ্ত রোদই ফণীমনসা ফুল ফোটার সঠিক সময়। সুদূর ক্যারিবিয়ান ও আমেরিকা আদি আবাস হলেও আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে গেছে। এখন এ উদ্ভিদ উষ্ণমণ্ডলীয় এলাকায় ছড়িয়ে গিয়ে অভিযোজিত হয়ে গেছে। আমাদের দেশে প্রায় সব জেলায় বাড়ির বাগানে দেখা যায়। গ্রাম এলাকায় বেড়া দিতে লাগানো হয় ফণীমনসা।
ফণীমনসা কাঁটাময় ক্যাকটাস। ১ থেকে ৩ মিটার লম্বা হয়। কাণ্ড নেই অথবা থাকলেও খুবই খাটো। চ্যাপ্টা আকৃতির পাতার মতো রসাল অঙ্গ থাকে। কাঁটাওয়ালা এ চ্যাপ্টা অংশকে বলা হয় এরিওল। প্রতি এরিওলে অনেকগুলো কাঁটা গুচ্ছময়ভাবে সন্নিবেশিত থাকে। কাঁটার রং হলুদ। প্রতি এরিওলে খুদে পাতা (৪ থেকে ৬ মিলিমিটার) থাকে, যা কিছুদিনের মধ্যেই ঝরে যায়। গ্রীষ্মে এরিওল অংশে ছোট ছোট ফুলের কুঁড়ি আসে। কুঁড়ি পূর্ণতা পেলে তাতে উজ্জ্বল হলুদ রঙের মাঝারি আকৃতির ফুল ধরে। ফুলের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮ সেন্টিমিটার। প্রতিটি ফুলে অসংখ্য পুংকেশর থাকে। ফল পাকলে বেগুনি বর্ণের হয়। ফল বহুবীজী। শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবেও লাগানো হয়।
এটি সমুদ্রের কাছাকাছি এলাকার গ্রামীণ ঝোপ, পর্বতের খাঁজে ও বালুময় মাটিতে ভালো জন্মে। ফণীমনসার বৈজ্ঞানিক নাম Opuntia dillenii, পরিবার Cactaceae। ইংরেজি নাম Prickly pear। বহুবর্ষজীবী এ ক্যাকটাস শুষ্ক আবহাওয়া পছন্দ করে। কেন্ডি, জেলি এ অ্যালকোহল তৈরিতে এ ক্যাকটাস ব্যবহার করা হয়। ফল ও ফুল খাবার হিসেবে ব্যবহার করে আমেরিকার আদিবাসীরা। ফুল থেকে প্রাপ্ত তেল সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। রস পোড়া ক্ষত নিরাময়ে ব্যবহার করে। সড়ক ও বাঁধের ঢালে ভূমিক্ষয় রোধ করতে ফণীমনসা লাগানো হয়।