করোনাকালে এ বছরের মধ্যে চতুর্থ দফা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট জেলার ধরলা নদীর তীরবর্তী বেশ কিছু গ্রাম। আর অতিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে নালিতাবাড়ী পৌর শহর ও গ্রামের কিছু নিম্নাঞ্চল। সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি চার দিন ধরে বেড়ে এখন বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় সেখানে পানি আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও গত দুই দিনের বৃষ্টির কারণে লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়ন ও কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ধরলা–তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের তিন হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার রায় বলেন, গত দুই দিনে ধরলা নদীর পানি বেড়ে সদরের মোগলহাট ও কুলাহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। তবে বর্তমানে পানি কমছে। এটি চতুর্থবারের পানি বৃদ্ধির ঘটনা বলে জানান তিনি।
স্থানীয় লোকজন জানান, করোনাকালে তিন দফা বন্যায় এরই মধ্যে তাঁদের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যেই চতুর্থ দফা পানি বৃদ্ধিতে তাঁরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। স্থানীয়দের তথ্যমতে, মে মাসের শেষের দিকে প্রথম দফা বন্যা দেখা দেয়। এরপর জুনের শেষ থেকে আবারও পানি বাড়ে। জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে আবারও পানি বাড়ে। ওই বন্যা আগস্ট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এবার চতুর্থ দফায় পানি বাড়ছে।
চতুর্থ দফা বন্যায় বিপর্যস্ত কুড়িগ্রামও। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর ইউএনও তৌহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হাজার দুয়েক পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। তবে পানি কমতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো ত্রাণ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান।
স্থানীয়রা জানান, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা সদর, শিমুলবাড়ি, বড়ভিটা ও ভাঙা মোর ইউনিয়নের ধরলা–তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি ওঠে গত বৃহস্পতিবার। করোনার কারণে এমনিতেই মানুষের কাজ নেই। কয়েক দফা বন্যায় এখন খাবারের সংকটও দেখা দিয়েছে।
পরপর চারবারের বন্যায় মানুষের অবস্থা কাহিল। সেই সঙ্গে নদীভাঙন শুরু হওয়ায় আরও বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে।
কুড়িগ্রাম–২ আসনের স্থানীয় সাংসদ পনির উদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, পরপর চারবারের বন্যায় মানুষের অবস্থা কাহিল। সেই সঙ্গে নদীভাঙন শুরু হওয়ায় আরও বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ধরলা নদীর অববাহিকার ৩৫ কিলোমিটার ও ১৬টি নদ–নদীর মধ্য ও তীরবর্তী এলাকাজুড়ে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েক শ হেক্টর রোপা আমনের খেত। ভাঙছে বসতভিটা, জনপদ, সড়ক, ফসলি জমি, সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও হাটবাজার।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের জগমোহনের চরে গতকাল শুক্রবার দুপুরে বৃষ্টির মধ্যে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙনের কারণে লোকজন তড়িঘড়ি করে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন। গত দুই দিনে চরের ৬৫টি বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। চরের ভেঙে আনা ঘর নৌকায় তুলতে তুলতে কথা হয় মো. ছকমলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বন্যার ধকল কাটে উঠতে না উঠতে ফির
বন্যা। আবাদ শ্যাষ। এলা বসতভিটা ভাগবার নাগছে। মাথা গোঁজার জাগা নাই। কোটে যাই। কেমন করি বাঁচি বাহে।’
অতিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঢলের পানির প্রবল চাপে গত বৃহস্পতিবার উপজেলার রামেরকুড়া ও দীঘিরপাড় এলাকায় মহারশি নদীর বেড়িবাঁধের চারটি স্থানে ভেঙে গিয়ে সদর ও হাতিবান্ধা ইউনিয়নের ১০ গ্রামের শতাধিক বাড়ি ও আমন ধানের খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। বিপুলসংখ্যক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
ঝিনাইগাতীর ইউএনও রুবেল মাহমুদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, অতিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের ফলে কয়েকটি গ্রামের ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। তবে বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতি উন্নতি হবে।
আর শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই নদের দুটি অংশের বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে নালিতাবাড়ী পৌর শহরের নিচপাড়া ও গোবিন্দনগর গ্রামের নিম্নাঞ্চল। এতে দুই শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।