চৈত্রদিনের বিলিম্বি

গাছে ঝুলছে বিলিম্বি। সম্প্রতি রাজধানীর ফার্মগেটের িবএআরসি চত্বর থেকে ছবিটি তুলেছেন লেখক
গাছে ঝুলছে বিলিম্বি। সম্প্রতি রাজধানীর ফার্মগেটের িবএআরসি চত্বর থেকে ছবিটি তুলেছেন লেখক

বেড়াতে গেছি উপকূলীয় জেলা খুলনার রংপুর কালীবাড়ি গ্রামে প্রকৃতি-অন্তঃপ্রাণ লেখক সন্দীপক মল্লিকের বাড়িতে। বাড়ির আঙিনায় দুটি গাছে ফুল ফুটেছে। একটি শ্বেত আকন্দ, অন্যটি বিলিম্বি। বিলিম্বিগাছের ডালপালার গা বেয়ে লাল-বেগুনি রঙের খুদে ফুলের যেন স্রোত নেমেছে। চৈত্রদিনে বিলিম্বিগাছে এমন ফুল-ফলের সম্ভার হয়। ঢাকায় ফিরে এসে ফার্মগেটে পুলিশ বক্সের পেছনে বিএআরসি প্রাঙ্গণেও দেখলাম একটা বিলিম্বিগাছ। সেটারও ডালপালা ফলে ফলে ভরে আছে।
বিলিম্বি এ দেশের হারিয়ে যেতে বসা এক অপ্রচলিত দেশি ফল। বিক্ষিপ্তভাবে কিছু গাছ দেখা যায়। উপকূলীয় অঞ্চলে বেশি। বান্দরবানের বালাঘাটায় হর্টিকালচার সেন্টারের মধ্যেও কয়েক বছর আগে দেখেছিলাম বিলিম্বির একটা বড় গাছ। ভারতের আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বিলিম্বি বেশ জনপ্রিয়। সেখানে বিলিম্বি বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। ধারণা করা হয়, বিলিম্বির আদি নিবাস মালাক্কা-ইন্দোনেশিয়া। এ দেশ ছাড়াও ভারত, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, মিয়ানমার প্রভৃতি দেশে বিলিম্বিগাছ দেখা যায়। ১৭৯৩ সালে তিমুর থেকে বিলিম্বিগাছ নিয়ে জ্যামাইকায় প্রথম লাগানো হয়েছিল। তাই এশিয়ার বাইরের কিছু দেশেও এ গাছ আছে।
বিলিম্বি ফল স্বাদে টক। তাই চৈত্রের দুপুরে কাঠফাটা রোদে এই ফল নুন দিয়ে চিবোতে বেশ লাগে। দুপুরের রোদে তা টনিকের মতো কাজ করে। ফল দিয়ে এ দেশে টক ডাল রান্না ও আচার বানানো হয়। বিলিম্বিগাছ মাঝারি আকৃতির। চিরসবুজ। দেখতে অনেকটা কামরাঙাগাছের মতো। বিলিম্বি যেন কামরাঙার যমজ ভাই। গাছকে বাড়তে দিলে ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ফল খুবই টক, লম্বায় প্রায় ৫-৮ সেন্টিমিটার, ব্যাসার্ধ ২ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার। ফল বেশ লম্বাটে এবং মাথার দিক কিছুটা মোটা। কামরাঙার মতো অত বেশি খাঁজকাটা নয়। তবে হালকা পাঁচটি খাঁজ বিলিম্বিতেও আছে। ফলের রং সুবজাভ হলুদ। গাছের কাণ্ড ও শাখা-প্রশাখায় থোকায় ফল ধরে। এখন আর শুধু টক বিলিম্বি নয়, বিজ্ঞানীরা এর একটি মিষ্টি স্বাদের জাতও উদ্ভাবন করেছেন।
বিলিম্বির বীজ থেকে চারা হয়। ডাল কেটে মাটিতে পুঁতে, অর্থাৎ শাখা কলম করে চারা তৈরি করা যায়।
বিলিম্বি খাওয়ার ফল হলেও এই গাছ বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ সারাতেও কাজে লাগে। এর পাতা বেটে মলমের মতো শরীরের কোথাও জ্বালাপোড়া, বাতব্যথা, ফোলা, হাম হলে সেখানে প্রলেপ দিলে উপশম হয়। ফুল ঠান্ডা লাগা ও সর্দি-কাশি সারাতে ব্যবহৃত হয়। ফলের শরবত নিয়মিত খেলে উচ্চ কোলেস্টেরল কমে। কাপড়ের দাগ তুলতে ফল ব্যবহার করা হয় আর কাপড় লাল রঙে রাঙাতে ব্যবহার করা হয় ফুল।