মানিকগঞ্জে সমাধির নকশার জন্য এল মর্যাদাপূর্ণ ‘রিবা’ পুরস্কার
স্থাপত্যে বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার রিবা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সিলেন্স-২০২৪ পেয়েছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ‘স্থাপতিক’। মানিকগঞ্জে শাহ মোহাম্মদ মহসীন খান দরগাহ বা সমাধি তৈরির জন্য এ পুরস্কার পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার স্থপতি মো. শরীফ উদ্দিন আহমেদ ওই সমাধির নকশা করেছেন।
বুধবার রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস (রিবা) এই দফায় পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেছে। তিন বছর পরপর বিশ্বের বিশিষ্ট স্থাপত্যকর্মের জন্য রিবা এ পুরস্কার দিয়ে থাকে। এবার বিশ্বের মোট ২২টি প্রতিষ্ঠান এ পুরস্কার পেয়েছে।
বাংলাদেশের স্থাপতিক এবং রংপুরে কারুপণ্যের সবুজ কারখানার জন্য ‘নকশাবিদ আর্কিটেক্টস’ প্রতিষ্ঠান দুটি এবার এ পুরস্কার পেয়েছে।
স্থপতি মো. শরীফ উদ্দিন আহমেদ আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে জানান, পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাট দিয়ে ব্যাগ তৈরি করা বিজ্ঞানী ও গবেষক মোবারক আহমদ খানের বাবার সমাধি তৈরির জন্য তিনি এবার এ পুরস্কার পেয়েছেন। মানিকগঞ্জে মুহম্মদ মুহসিন খান ছিলেন একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তিনি পীর ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর পারিবারিকভাবে মানিকগঞ্জে এ স্থাপনা তৈরি করা হয়। মানিকগঞ্জের শিববাড়ী–হিজুলী এলাকায় ২০২২ সালে স্থাপনাটি তৈরির কাজ শেষ হয়। এখানেই মুহম্মদ মুহসিন খান, তাঁর স্ত্রী বেগম নূরজাহান ও বাবা মো. ইসমাইল খানের কবর আছে।
মো. শরীফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্থাপনাটিকে সেই অর্থে মাজার বলা যাবে না। এটি একেবারেই পারিবারিক একটি সমাধি, যা মুহম্মদ মুহসিন খানের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য পারিবারিক উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে।
স্থাপনাটির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে এই স্থপতি বলেন, সুলতানি আমলের ষাট গম্বুজ মসজিদের স্থাপত্যশৈলী থেকে উৎসাহিত হয়ে এটির নকশা করা হয়েছে। মুহম্মদ মুহসিন খান সুফিবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী তিনি বেহেশতবাসী হবেন, এমন চিন্তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ‘বেহেশতের ঝাড়বাতি’ থিমে এটি করা হয়েছে। আকাশ থেকে সরাসরি সূর্যের আলো, চাঁদের আলো যাতে স্থাপনার ভেতর ঢুকতে পারে, তা গুরুত্ব পেয়েছে স্থাপনাটিতে। পলিমাটি দিয়ে তৈরি ইট এবং স্থাপনার আশপাশ থেকেই স্থাপত্য উপাদান সংগ্রহ করা হয়েছে।
স্থপতি মো. শরীফ উদ্দিন আহমেদ জানান, যে ২২টি প্রতিষ্ঠান এবার রিবা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সিলেন্স-২০২৪ পেয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আরেকটি প্রতিযোগিতা হবে নভেম্বর মাসে। সেখানে একটি প্রতিষ্ঠানকে সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হবে।
দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে স্থাপত্যবিদ হিসেবে কাজ করছেন মো. শরীফ উদ্দিন আহমেদ। ২০০৫ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য ডিসিপ্লিনে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৭ সালে নিজে গড়ে তোলেন ‘স্থাপতিক’ নামের প্রতিষ্ঠানটি। স্থাপত্যচর্চার পাশাপাশি তিনি খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করছেন আহ্ছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির স্থাপত্য বিভাগে। এর আগেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক কাজে অংশ নিয়ে তিনি পুরস্কৃত হয়েছেন।
শাহ মোহাম্মদ মহসীন খান সমাধি প্রকল্পের জন্য এর আগে ২০২৩ সালে ইউনিয়ন অব ইন্টারন্যাশনাল আর্কিটেক্টসের ফ্রেন্ডলি অ্যান্ড ইনক্লুসিভ স্পেস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন। এ ছাড়া এ প্রকল্পের জন্য মর্যাদাপূর্ণ এরিখ মেন্ডেলসন অ্যাওয়ার্ড প্রতিযোগিতায় ব্রিক আর্কিটেকচার ক্যাটাগরিতে মনোনীত হয়েছিলেন।
যশোরের ছেলে মো. শরীফ উদ্দিন আহমেদ জানান, স্থাপত্যশিল্পে ইউরোপিয়ান বা আমেরিকান স্থাপত্যের অনুকরণ চলছে। তবে তিনি লোকজ উপাদান, জলবায়ু ও মাটির বৈশিষ্ট্যকে প্রাধান্য দিয়ে স্থাপনা সৃষ্টি করেন। নিজেদের স্থাপত্যরীতি খুঁজে বের করে সে আদলে স্থাপনা তৈরির চ্যালেঞ্জ নেন তিনি। তাঁর স্ত্রী নুসরাত শারমীনও একজন স্থপতি।