২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

অনিয়মে শাস্তি পাওয়া কর্মকর্তার জন্য মির্জা আজমের ডিও লেটার, দুই মাস পর প্রত্যাহার

মির্জা আজম বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক সহকর্মী হয়তো তাঁর স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন। ভুল বুঝতে পেরে নিজেই ডিও লেটার প্রত্যাহার করেছেন
ছবি: সংগৃহীত

অনিয়মের কারণে শাস্তি পাওয়া প্রশাসনের একজন কর্মকর্তাকে পদায়নের জন্য আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) দিয়েছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজম। দুই মাস পরে এসে গতকাল বুধবার সেই ডিও লেটার তিনি প্রত্যাহার করেছেন। এই কর্মকর্তা হলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নাজমুন নাহার।

অসদাচরণ ও দিঘি বন্দোবস্তে অনিয়মের জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বরে নাজমুন নাহারকে শাস্তি দেওয়া হয়। সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ভঙ্গ করায় তাঁর দুই বছরের বার্ষিক বেতন বাড়ানো স্থগিত রাখা হয়।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম জামালপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য। গত ১৭ জুন তাঁর স্বাক্ষরিত একটি ডিও লেটার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবকে পাঠানো হয়। তাতে লেখা হয়, ‘বেগম নাজমুন নাহার ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা আমার বিশেষ সুপরিচিত এবং স্নেহভাজন। তিনি দীর্ঘদিন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকার পর গত ৫ এপ্রিল পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন।

কিন্তু গত দুই মাসেও তাঁর যোগদানের চিঠি গ্রহণ করা হয়নি এবং ৭ জুন তাঁকে ওএসডি করা হয়। তিনি একজন নিষ্ঠাবান, সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা। এ অবস্থায় তিনি যেকোনো একটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা সংস্থায় বদলির জন্য আবেদন করেছেন। তাঁর আবেদনটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর সুপারিশ করছি।’

মির্জা আজম তাঁর ডিও লেটারটি প্রত্যাহার করে নিতে গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘নাজমুন নাহারের আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং রাজনৈতিক সহকর্মীর সুপারিশে গত ১৭ জুলাই পাঠানো ফরোয়ার্ডিং লেটারটি প্রত্যাহার করা হলো। ফরোয়ার্ডিং লেটারটি প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

তাঁর এই চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন মির্জা আজম। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন একজন কর্মকর্তার জন্য আমার স্বাক্ষরে সুপারিশ গেছে, যা খুবই দুঃখজনক। এটা প্রমাণিত যে সে একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। আর আমি সুপারিশ করেছিলাম, এটাও তো অস্বীকার করার উপায় নেই।’ আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘প্রতিদিনই আমি অসংখ্য সুপারিশ করি, কোথাও কোনো দিন এ পরিস্থিতিতে পড়িনি।

কোনো রাজনৈতিক কর্মী হয়তো এটা স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে গেছেন। কিন্তু কে কখন নিয়ে গেছেন, সেটা মনে নেই। এটা আমার ভুল ছিল। আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলি, আবার আমিই এ ধরনের ডিও লেটার দিয়েছি, যা আমাকে বিব্রত করেছে। তাই নিজে মন্ত্রণালয়ে গিয়ে প্রত্যাহারের ডিও দিয়ে এসেছি।’

গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আলী আজম স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপনে নাজমুন নাহারকে শাস্তি দেওয়ার কথা জানানো হয়। তাতে বলা হয়, নাজমুন নাহারের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’–এর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগের গুরুত্ব এবং সার্বিক বিষয় বিবেচনায় একই বিধিমালার ৪(২)(খ) বিধি অনুসারে তাঁকে দুই বছরের জন্য বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখার লঘুদণ্ড দেওয়া হলো। ভবিষ্যতে তিনি এই মেয়াদের কোনো বকেয়া পাবেন না এবং এই মেয়াদ বেতন বৃদ্ধির জন্য গণনা করা যাবে না।

নাজমুন নাহার ২০০৪ সালের ৩ এপ্রিল থেকে ২০০৭ সালের ৫ জুন পর্যন্ত নাটোরের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সে সময় বৈজ্ঞানিক উপায়ে মাছ চাষের জন্য নাটোর আধুনিক মৎস্য চাষ প্রকল্প লিমিটেডের অনুকূলে ১০ বছরের জন্য বন্দোবস্তকৃত নাটোর সদর উপজেলার ১ নম্বর খাস খতিয়ানের ২৭ দশমিক ১৬৯৬ একর আয়তনের অর্ধবঙ্গেশ্বরী রানি ভবানী দিঘির দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত প্রস্তাব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই বিধিবহির্ভূতভাবে অগ্রায়ন করেন। পরে জেলা প্রশাসক তা অনুমোদন দেন।

এ ঘটনায় নাজমুন নাহারের বিরুদ্ধে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’–এর বিধি ৩ (খ) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’–এর অভিযোগ এনে বিভাগীয় মামলা করা হয়। তাতেই শাস্তি পেয়েছিলেন তিনি।

এ বিষয়ে নাজমুন নাহার প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আমি মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছি। আমার আপিল মঞ্জুর হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে দণ্ড ও বিভাগীয় মামলা কোনোটাই নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমি গত ছয় বছর ধরে ওএসডি অবস্থায় আছি। আমার কর্মস্পৃহা ও সামাজিক সম্মান যেন নষ্ট না হয় সেজন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পদায়নের জন্য আবেদন করেছি। আমি বিভিন্ন জেলায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে নিষ্ঠার সঙ্গে চাকরি করেছি। আমি দুর্নীতিবাজ নই।’