চির–নূতনেরে দিল ডাক পঁচিশে বৈশাখ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

‘মোর চিত্ত-মাঝে/ চির-নূতনেরে দিল ডাক/ পঁচিশে বৈশাখ।’ জন্মদিনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এভাবেই নিজের হৃদয়ে নূতনের আহ্বান উপলব্ধি করেছিলেন। আজ আবার বর্ষ ঘুরে এল তাঁর জন্মতিথি। আজ তাঁর ১৬২তম জন্মবার্ষিকী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর অমিত প্রতিভায় বাঙালির রুচি ও সংস্কৃতি গড়ে তুলেছেন। সাহিত্যের নানা শাখা থেকে সংগীত, নৃত্য, চিত্রকলা ও নাটক পর্যন্ত বিচিত্র শিল্পক্ষেত্রকে তাঁর প্রতিভার স্পর্শে অনন্য করে তুলেছিলেন। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলির জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়ে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বসাহিত্যে প্রতিষ্ঠিত করেন।

বাঙালির সংকটে, সংগ্রামে, আনন্দে, বেদনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা অনুপ্রেরণা ও আত্মবিশ্বাস জাগিয়েছে। ইতিহাসের নানা বাঁকে নতুন ব্যঞ্জনায় তাঁর সৃষ্টি সমকালের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের আগে তিনি হয়ে উঠেছিলেন পূর্ব বাংলার আত্মানুসন্ধানের অন্যতম কেন্দ্র; মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর গান ও কবিতা জুগিয়েছে সাহস। বাংলাদেশ পরম ভালোবাসায় তাঁর গানকে গ্রহণ করেছে জাতীয় সংগীত হিসেবে।

আরও পড়ুন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিসম্ভার পরিমাণে ও বৈচিত্র্যে বিপুল। তবু শুধু সৃষ্টিশীল চর্চাতেই নিজেকে নিমগ্ন রাখেননি। শিক্ষা, সমাজসংস্কার, কৃষি, গ্রামীণ অর্থনীতিসহ নানা বিষয়ে তাঁর ভাবনা ও কর্মশীলতার বিস্তৃতি সমীহ জাগানোর মতো। ১৩৩৮ বঙ্গাব্দের রবীন্দ্রজয়ন্তীর মানপত্রে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যে লিখেছিলেন, ‘তোমার প্রতি চাহিয়া আমাদের বিস্ময়ের সীমা নাই’, তা যথার্থ। কোনো জাতির মর্মের গভীরে এত গভীর প্রভাব বিস্তার করা মানুষ বিশ্বে বিরল।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে। ছিলেন বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মা সারদা সুন্দরী দেবীর চতুর্দশ সন্তান। ঠাকুরবাড়ির পারিবারিক ঐতিহ্য তাঁর চিত্তকে শৈশব থেকেই গড়ে তুলেছিল। জমিদারির কাজে পূর্ব বাংলার নদীপথ, নিসর্গ ও গ্রামীণ জীবনযাত্রা তাঁর মন চিরদিনের জন্য বদলে দেয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে কেবল প্রেরণাই দেননি, নিজেও সোচ্চার হয়েছেন। জালিয়ানওয়ালাবাগে ব্রিটিশ শাসকদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বর্জন করেছিলেন তাদের দেওয়া নাইটহুড উপাধি। তাঁর দীর্ঘ ৮০ বছরের কর্মময় জীবনের অবসান ঘটেছিল ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের বাইশে শ্রাবণ।

বাসস জানায়, রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বাণীতে বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনাদর্শ ও তাঁর সৃষ্টিকর্ম শোষণ-বঞ্চনামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে চিরদিন বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করবে। তিনি বলেন, অহেতুক যুদ্ধ-সংঘাত, মৌলবাদের উত্থান, জাতীয়তাবোধের সংকীর্ণতা, শ্রেণিবৈষম্য, হানাহানি—এসবের কারণে বর্তমান বিশ্বে রবীন্দ্রনাথ আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন।

কর্মসূচি: সারা দেশে বিভিন্ন সংগঠন রবীন্দ্রজয়ন্তী উদ্‌যাপনের কর্মসূচি নিয়েছে। সরকারি উদ্যোগে জাতীয় পর্যায়ে রয়েছে বিস্তারিত কর্মসূচি। বাসস জানায়, এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হবে রবীন্দ্র-স্মৃতিবিজড়িত নওগাঁর পতিসরে।

এ ছাড়া কবির স্মৃতিময় কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠান হবে। তাতে থাকবে রবীন্দ্রমেলা, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আলোচনা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজন করা হয়েছে তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলা একাডেমিও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

ছায়ানট নিয়েছে দুই দিনের কর্মসূচি। আজ ও আগামীকাল সন্ধ্যায় ছায়ানট মিলনায়তনে তাদের অনুষ্ঠান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ বেলা ১১টায় টিএসসি মিলনায়তনে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।