নোয়াখালীতে বৃদ্ধকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় রহস্য উদ্‌ঘাটনের কাছাকাছি পুলিশ

বাড়ির সামনে গলা কাটা অবস্থায় পড়ে থাকা বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত রোববার নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চর জব্বর ইউনিয়নের চর রশিদ গ্রামেফাইল ছবি

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধকে বাড়ির দরজায় গলা কেটে হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও প্রযুক্তির সহায়তায় আজ শনিবার ও গত বুধবার তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে এরই মধ্যে ঘটনার নেপথ্যে কাহিনি জানতে পেরেছে বলে দাবি পুলিশের। তদন্তের স্বার্থে এখনই এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বৃদ্ধ আবদুল খালেক ওরফে খাজা খালেক গত শনিবার রাতে উপজেলার চর ওয়াপদা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চর রশিদ গ্রামের বাড়ির সামনে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন। দুর্বৃত্তরা বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে তাঁর গলা কেটে লাশ বাড়ির সামনে চলাচলের সড়কের পাশে ফেলে যায়। পরদিন রোববার সকালে স্থানীয় লোকজনের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ নিহত খালেকের লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় তাঁর ছেলে বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

সূত্র জানায়, লাশ উদ্ধারের পর থানা-পুলিশ এই বৃদ্ধের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদ্ধারে নানামুখী তৎপরতা চালায়। কিন্তু নিকট অতীতে নিহত আবদুল খালেকের সঙ্গে আশপাশের কারও সঙ্গে কোনো বিরোধ কিংবা শত্রুতার তথ্য পাওয়া যায়নি। পরিবারের পক্ষ থেকেও পুলিশকে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। যার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ অনেকটা অন্ধকারে থেকেই ঘটনার নেপথ্যের কারণ উদ্‌ঘাটন এবং ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে কাজ শুরু করে।

জেলা পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বৃদ্ধ আবদুল খালেক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কিছু গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার দিবাগত রাতে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়। আটকের পর তাঁদের থানায় এনে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ওই ব্যক্তিরা অসংলগ্ন বক্তব্য দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের বৃহস্পতিবার আদালতে উপস্থাপন করে একজনকে তিন দিনের, আরেকজনকে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

ওই কর্মকর্তা জানান, রিমান্ডে নেওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ঘটনার সঙ্গে তাঁদের এবং সম্পৃক্ত অন্যদের বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল আরও একজনকে আটক করা হয়। এই তিনজনের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে বৃদ্ধ খালেক হত্যাকাণ্ডের বিষয়ের মূল রহস্য অনেকটাই বেরিয়ে এসেছে। সেই সঙ্গে পুরো ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিষয়েও সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। যার ভিত্তিতে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে, দীর্ঘদিনের পুরোনো একটি ঘটনাকে পুঁজি করে তৃতীয় একটি পক্ষ এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চর জব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাউছার আলম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, আবদুল খালেক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ওই দুজনের তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার (গতকাল) আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ও আটক ব্যক্তিরা প্রাথমিকভাবে ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে শিগগিরই গণমাধ্যমকে আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অবহিত করা হবে।