‘খেলনার মোড়কে’ যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে গাঁজার কেক, চকলেট

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা মাদক উদ্ধার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। সংবাদ সম্মেলনে তা দেখানো হয়। ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ডাক বিভাগের মাধ্যমে দেশে এসেছিল একটি পার্সেল। সেটি দেখতে অনেকটা শিশুদের খেলনার মোড়কের মতো। কিন্তু তা খেলনা ছিল না, ছিল মাদক।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) মাদক আনার ঘটনায় ‘জড়িত’ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল সোমবার গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মাদকের মধ্যে ছিল গাঁজার নির্যাসযুক্ত (টেট্রাহাইড্রো ক্যানাবিনল) কুশ, গাঁজার কেক (ক্যানাবিস কেক) ও চকলেট (ক্যানাবিস ইনফিউজড গামিজ)।

গ্রেপ্তার তিন ব্যক্তি হলেন ইমরান আহমেদ রাজ (২০), মো. রাসেল মিয়া (২৯) ও মো. রমজান মিয়া (২০)। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দাবি, দেশে এসব মাদকের ব্যবহার কম। ফলে দেখে বোঝার উপায় নেই যে সেগুলো মাদক। উদ্ধার করা মাদকের দাম প্রায় এক কোটি টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী। তিনি বলেন, ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ডাকযোগে সন্দেহজনক একটি পার্সেল আসার তথ্য তাঁদের কাছে ছিল। পার্সেলটি এমনভাবে মোড়কজাত করা হয়েছিল, যাতে যন্ত্রের পরীক্ষায় (স্ক্যান) ধরা না পড়ে।

ডাক বিভাগের সহযোগিতায় পার্সেলটির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল জানিয়ে মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী বলেন, পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁরা নিশ্চিত হন যে সেগুলো মাদক। তিনি আরও বলেন, পার্সেলটির ওপর কোনো ঠিকানা লেখা ছিল না। শুধু একটি মুঠোফোন লেখা নম্বর ছিল। এর সূত্র ধরেই আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজার থেকে মো. রাসেল মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। পরে তাঁর কথার সূত্র ধরেই বাকি দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে মাদক উদ্ধারের ঘটনা তুলে ধরেন সংস্থাটির মহাপরিচালক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী। ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ রাজধানীর সেগুনবাগিচায়।
ছবি: প্রথম আলো।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, টেট্রাহাইড্রো ক্যানাবিনল হলো গাঁজার নির্যাস দিয়ে তৈরি একধরনের রাসায়নিক। কুশ হলো হলো গাঁজার ফুল প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করা মাদক।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কর্মকর্তারা একটি কার্টনের ভেতর ছয়টি প্যাকেটের মধ্যে থেকে ১ হাজার ৩৫০ গ্রাম কুশ উদ্ধার করেন। একই কার্টনের ভেতরে ২৮ গ্রাম করে ওজনের ৯টি গাঁজার চকলেট উদ্ধার করা হয়। গাঁজার কেক উদ্ধার করা হয় ১০টি, প্রতিটির ওজন ৬০ গ্রাম। সব কটিই যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এ ধরনের মাদক কার মাধ্যমে আসে, কারা সেবন করে, সে বিষয়গুলো তাঁরা নিশ্চিত হতে পারেননি। গ্রেপ্তার তিন ব্যক্তিকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রায়ই মাদক উদ্ধার নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে তাদের করা ৩ হাজার ৬৬৯টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে সাজা হয়েছে ৪৬ শতাংশ মামলায়। ১ হাজার ৯৭১টি মামলায় কারও অপরাধ প্রমাণ করতে পারেনি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।