‘হঠাৎ বিকট শব্দ, আর কিছুই মনে নেই’

দুর্ঘটনাকবলিত পুলিশের গাড়ি। আজ রোববার দুপুরে সীতাকুণ্ডের ফকিরহাট এলাকায়ছবি: সংগৃহীত

‘গাড়ি তখন রেললাইনের ওপর। এরপর হঠাৎ বিকট শব্দ। আর কিছুই মনে নেই।’ কথাগুলো বলতে গিয়ে কয়েকবার দম নিলেন মো. শাহাদাত হোসেন। তাঁর চোখে পানি। বেঁচে আছেন, তা যেন বিশ্বাস হচ্ছে না তাঁর!

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাহাদাত। পাশেই দাঁড়িয়ে তাঁর ভয়ংকর এ অভিজ্ঞতার কথা শুনছিলেন স্বজনেরা।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে আজ রোববার পুলিশ ভ্যানে ট্রেনের ধাক্কার ঘটনায় বেঁচে ফিরেছেন সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য শাহাদাত হোসেন। এ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তিনজন। শাহাদাত ছাড়া আহত হয়েছেন আরও দুজন।

শাহাদাতের ঘাড়ের ডান পাশের হাড় ভেঙে গেছে। গুরুতর আঘাত লেগেছে চোয়ালের একটি অংশে। শাহাদাতের আহত হওয়ার খবর শুনে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ছুটে এসেছেন তাঁর চাচাতো ভাই কাজী গোলাম মহিউদ্দিন। ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছিলেন তিনি। আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সামনে কথা হয় শাহাদাতের ভাতিজা আশরাফ উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর চাচা কথা বলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু চোয়ালের আঘাতের কারণে স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারছেন না।

রেলাইনের ওপর থেমে যায় গাড়ি

আজ বেলা সোয়া ১২টার দিকে সীতাকুণ্ড থানা–পুলিশের একটি টহল দল ইউপি সদস্য শাহাদাত হোসেনকে নিয়ে অভিযানে যাচ্ছিল। পথে সলিমপুর ইউনিয়নের উত্তর ফকিরহাট রেলগেট এলাকায় রেললাইন পার হওয়ার সময় হঠাৎ পুলিশের গাড়িটি থেমে যায়। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি পুলিশের গাড়িটির পেছনের অংশে ধাক্কা দেয়।

দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া সীতাকুণ্ড উপজেলার সলিমপুর ইউপির সদস্য মো. শাহাদাত হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই নিহত হন সীতাকুণ্ড থানার কনস্টেবল মিজানুর রহমান (৩৫)। পরে আহত আরও দুই পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়। তাঁরা হলেন সীতাকুণ্ড থানার কনস্টেবল মোহাম্মদ হোসাইন (৩৫) ও এসকান্দার আলী মোল্লা (৪০)। আহত দুজন হলেন উপপরিদর্শক (এসআই) সুজন শর্মা ও গাড়িচালক কনস্টেবল সমর চন্দ্র সূত্রধর। তাঁরা হাত ও মাথার পেছনের অংশে আঘাত পেয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ ওয়াসিম বলেন, দুপুরের দিকে অন্যান্য দিনের মতো দোকানে কাজ করছিলেন তিনি। এ সময় সীতাকুণ্ড পুলিশের একটি গাড়ি উত্তর ফকিরপাড়া এলাকায় থাকা রেলগেট পার হচ্ছিল। এরপর একটি বিকট শব্দ শুনে ছুটে আসেন রেলগেট এলাকায়। এসেই দেখেন গাড়ির পেছনের অংশ বিধ্বস্ত, মাটিতে পড়ে আছেন কয়েকজন। পরে তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

দুর্ঘটনায় আহতদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। আজ রোববার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

কীভাবে বাঁচবেন কনস্টেবল হোসাইনের মা?

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টারে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা যায়। সেখানে আছেন নিহত ব্যক্তিদের সহকর্মী কনস্টেবল মোহাম্মদ রায়হান। তিনি বলেন, ‘এভাবে তাঁরা চলে যাবেন, মেনে নিতে পারছি না। এক সপ্তাহ আগেই মোহাম্মদ হোসাইনের বাবা মারা গেছেন। সাত দিনের মাথায় তিনিও সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন। তাঁর মা হার্টের রোগী। তিনি কীভাবে বাঁচবেন।’

আরও পড়ুন