রাজু ভাস্কর্য কালো কাপড়ে ঢেকে দিল ছাত্রলীগ
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করার অভিযোগ তুলে ‘সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য’ কালো কাপড়ে ঢেকে দিয়েছে ছাত্রলীগ। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর রাজু ভাস্কর্যে ছাত্রলীগের স্থাপিত প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংবলিত মেট্রোরেলের অস্থায়ী প্রতিকৃতি ভাঙচুরের পর রাতে ভাস্কর্যটি কালো কাপড়ে ঢেকে দেওয়া হয়৷
আজ বুধবার দুপুরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে দেখা যায়, কালো কাপড়ে রাজু ভাস্কর্য ঢেকে দেওয়ার পাশাপাশি গত রাতে ভাস্কর্যের কাঠামোর ওপর একটি ব্যানারও সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে ‘সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে ছাত্র ইউনিয়নের সন্ত্রাসী কার্যক্রম’। ছাত্রলীগের একাধিক নেতা-কর্মী প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, তাঁদের সংগঠনের উদ্যোগেই এই কাজ করা হয়েছে। তবে ছাত্রলীগের নেতারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা’ প্রতিবাদ হিসেবে এটা করেছেন।
জানতে চাইলে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির (শয়ন) আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে সব ধরনের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংগঠনের সহাবস্থানে বিশ্বাস করে। রাজু ভাস্কর্যের সামনে জাতির পিতার কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার একটি প্রতিকৃতি ছিল। দুষ্কৃতকারীরা সেটি ভেঙে দিয়েছে। এটি একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। এর প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্য কালো চাঁদোয়ায় ঢেকে দিয়েছে।’
গতকাল সন্ধ্যায় বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের উদ্যোগে জোটভুক্ত সংগঠনগুলো পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি বিপুল চাকমাসহ চারজনকে হত্যার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে মশালমিছিল করে। মিছিল শেষে সমাবেশ করতে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এলে মিছিল থেকে নেতা-কর্মীদের একটি অংশ প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংবলিত মেট্রোরেলের প্রতিকৃতিতে ভাংচুর করে। পরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের ওপর হামলা করেন। এতে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর ৮ থেকে ১০ জন নেতাকর্মী আহত হন।
ছাত্রলীগের হামলায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের মশাল মিছিলের শেষ দিকে মিছিল থেকে ৮ থেকে ১০ জন ছেলে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে ব্যানারে ভাঙচুর করতে শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে জোটের নানা সংগঠনের কর্মীরা ছিলেন, সংগঠনের বাইরে থেকেও কেউ কেউ ছিলেন। কিন্তু এটা জোটের কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না, ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে কয়েকজন এটা করেছেন। একজন আগুন দেওয়ার চেষ্টা করছেন দেখে তাঁকে থামাতে তিনি রাজু ভাস্কর্যে উঠেছিলেন। তখন কথা কাটাকাটির মধ্যে ছাত্রলীগের এক নেতা তাঁর গলা চেপে ধরেন।
মেট্রোরেলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন (টিএসসি এলাকা) উদ্বোধন সামনে রেখে গত মাসের শেষে রাজু ভাস্কর্যে প্রধানমন্ত্রীর ছবিসংবলিত মেট্রোরেলের অস্থায়ী প্রতিকৃতি স্থাপন করে ছাত্রলীগ। এতে ‘থ্যাংক ইউ শেখ হাসিনা’ লেখা ছিল। এর প্রতিবাদ জানিয়ে ১ ডিসেম্বর বিবৃতি দেয় ছাত্র ইউনিয়ন। ছাত্রলীগকে রাজু ভাস্কর্য থেকে এটি সরানোর আহ্বানও জানিয়েছিল তারা। গতকাল মশাল মিছিলে জমায়েত থাকায় কর্মীদের কেউ কেউ এটি সরানোর সুযোগ হিসেবে দেখেছেন বলে মনে করছেন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মেঘমল্লার৷ এটি সরানো নিয়ে আগে সোচ্চার হওয়ায় ছাত্রলীগ এখন ছাত্র ইউনিয়নকে ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রমের’ জন্য অভিযুক্ত করছে বলে মনে করছেন তিনি।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান (সৈকত) প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্র ইউনিয়নের ‘সন্ত্রাসী কার্যকলাপে’ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। যাঁরা কাজটি (মেট্রোরেলের প্রতিকৃতি ভাঙচুর) করেছে, তাদের দ্রুত ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত।
১৯৯২ সালে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষের মধ্যে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে টিএসসি এলাকায় মিছিল বের করেছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্র ঐক্যের একদল নেতাকর্মী। ওই মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছিলেন সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র এবং ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা মঈন হোসেন রাজু। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে টিএসসিতে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য গড়ে তোলা হয়। বিভিন্ন উৎসব ছাড়াও যে কোনো জাতীয় অর্জন উদ্যাপনে রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমবেত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।