করোনাকালে বিয়ে হওয়া শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরানোই বড় চ্যালেঞ্জ

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথিরাছবি: প্রথম আলো

করোনাকালে বাল্যবিবাহের শিকার অনেক স্কুলশিক্ষার্থী আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যায়নি। কিশোরীদের মানবাধিকার রক্ষা করতে হলে এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে আবার পড়ালেখায় ফিরিয়ে আনতে হবে। একই সঙ্গে তাদের ওপর পারিবারিক নির্যাতন ও সহিংসতা বন্ধ করা না গেলে সমতা রক্ষা সম্ভব নয়।

কিশোরীদের মানবাধিকার রক্ষা নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আলোচকদের বক্তব্যে এসব কথা উঠে আসে। ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ভূমিকা রাখায় পাঁচজন নারী ও একজন ট্রান্সজেন্ডারকে সম্মাননা দেওয়া হয় অনুষ্ঠানে।

গাইবান্ধা থেকে আসা উম্মে হাবিবা সম্মাননা পাওয়াদের একজন। সে নিজের ১৮ জন সহপাঠীকে স্কুলে ফিরিয়ে আনার অভিজ্ঞতার কথা জানায়। এই ১৮ জন স্কুলশিক্ষার্থী করোনাকালে বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছিল।

ইউনাইটেড নেশনস পপুলেশন ফান্ডের (ইউএনএফপিএ) বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্রিস্টিন ব্লখস বলেন, মাঠ পর্যায়ে কাজ করা মানুষেরা একাই বহুজনের প্রতিনিধিত্ব করেন।
মেয়েদের শিক্ষা, ক্ষমতায়ন ও তাদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের পাশে আছে বলে নিশ্চিত করেন ব্রিটিশ হাইকমিশনের কাউন্সিলর এবং হেড অব গভর্ন্যান্স ও পলিটিক্যাল টিম টম বার্জ।

বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ভন লিনডে বলেন, জোরালো একটি কণ্ঠস্বরও অনেক কিছু বদলে দিতে পারে। এর প্রমাণ আয়োজনে মানবাধিকার পদক পাওয়া নারীরা। অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তাঁরা নিজের জায়গা থেকে চেষ্টা করেছেন। তাই মেয়েশিশুদের মানবাধিকার রক্ষার প্রচেষ্টায় তাঁদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

স্বাগত বক্তব্যে বিয়ে হয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের আবার বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনার ওপর গুরুত্ব দেন এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।

সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আরও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। এ জন্যই ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন। কাউকে পেছনে রেখে এগিয়ে যাওয়া যায় না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর যৌন হয়রানি বন্ধে সোচ্চার হতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, কানাডিয়ান হাইকমিশনার নাথালি চার্ড, ইউএন উইমেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি গীতাঞ্জলি সিং এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব লুবনা ইয়াসমিন প্রমুখ।

অনুষ্ঠান শেষে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা আয়োজন করা হয়। বটতলা থিয়েটার দলের সদস্যরা তিন নারীর জীবনে ঘটে যাওয়া সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা মঞ্চ নাটক পরিবেশন করেন। মঞ্চে তায়কোয়ান্দো উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ তায়কোয়ান্দো ফেডারেশনের সদস্যরা।

সবার জন্য মর্যাদা, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার বিশ্বজুড়ে পালিত হবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। এই প্রতিপাদ্য সমর্থনে কিশোরীদের মানবাধিকার রক্ষা আয়োজনে এমজেএফের স্লোগান হচ্ছে ‌‘আমরা দাঁড়াব, আমরা রুখব, আমরাই করব বিশ্বজয়’।