মুখে কালো কাপড় বেঁধে সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তুলে নেওয়ার প্রতিবাদ
মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে রাতে সিআইডি পরিচয়ে তুলে নেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছেন বামধারার ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মী ও সমমনা ব্যক্তিরা। এই সাংবাদিকের মুক্তি দাবিতে আজ বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁরা। পরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা।
বামধারার আটটি ছাত্রসংগঠনের মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট ও গণসংহতি আন্দোলনের ছাত্রসংগঠন ছাত্র ফেডারেশনের নেতা-কর্মীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। তাঁদের সঙ্গে প্রতিবাদে শামিল হন সমমনা বেশ কয়েকজন ব্যক্তি।
গত রোববার প্রথম আলো অনলাইনের একটি প্রতিবেদন ফেসবুকে প্রকাশের সময় দিনমজুর জাকির হোসেনের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি ‘কার্ড’ তৈরি করা হয়। সেখানে উদ্ধৃতিদাতা হিসেবে দিনমজুর জাকির হোসেনের নাম থাকলেও ভুল করে ছবি দেওয়া হয় একটি শিশুর। পোস্ট দেওয়ার ১৭ মিনিটের মাথায় অসংগতিটি নজরে আসে এবং দ্রুত তা প্রত্যাহার করা হয়। পাশাপাশি প্রতিবেদন সংশোধন করে সংশোধনীর বিষয়টি উল্লেখসহ পরে আবার অনলাইনে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনের কোথাও বলা হয়নি যে উক্তিটি ওই শিশুর। বরং স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে, উক্তিটি দিনমজুর জাকির হোসেনের।
ওই প্রতিবেদন করেছিলেন শামসুজ্জামান। তাঁকে আজ বুধবার ভোররাত চারটার দিকে তাঁর সাভারের বাসা থেকে সিআইডি পরিচয়ে তুলে নেন কয়েকজন। এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং শামসুজ্জামানের মুক্তি চেয়ে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে মুখে কালো কাপড় বেঁধে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমবেত হন বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মী ও সমমনা ব্যক্তিরা। সেখানে প্রায় ১৫ মিনিট মৌন অবস্থান করেন তাঁরা। এ সময় তাঁদের হাতে ‘ফ্রি শামস’, ‘সংবাদ প্রকাশ অপরাধ নয়’, ‘সাংবাদিকতা অপরাধ নয়’, ‘অবিলম্বে শামসুজ্জামান শামসের মুক্তি দাও’ ও ‘নজরদারিমুক্ত গণমাধ্যম চাই’ লেখা প্ল্যাকার্ড ছিল।
আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মেঘমল্লার বসু। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিরোধ করার সময় প্রায় শেষ। স্বাধীনতা দিবসে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করায় প্রথম আলোর একজন সাংবাদিককে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার দেশের জনগণের সঙ্গে একটি অঘোষিত যুদ্ধ জারি করেছে। সেই যুদ্ধকে তারা আরও প্রবল করে তুলছে। সাংবাদিকতাকে সন্ত্রাস হিসেবে দেখানো হচ্ছে এবং সাংবাদিকতা করার কারণে মানুষকে ধরে ধরে জেলে পোরা হচ্ছে।’
মেঘমল্লার আরও বলেন, প্রথম আলোর প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, যে ব্যক্তির ছবি দেওয়া হয়েছে, সে বক্তা নয়; বক্তা অন্য একজন, যিনি পেশায় দিনমজুর। সেটিকে উপেক্ষা করা এমন একটি আবহ তৈরি করা হলো যে এখানে সাংবাদিকতার নামে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।
এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে ছাত্র ইউনিয়নের এই নেতা বলেন, ‘আমরা অদ্ভুত এক রাষ্ট্রে বসবাস করি। রমজানে দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেলে এই রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় না, সাংবাদিক-লেখক ও মুক্তবুদ্ধির মানুষদের জেলে পোরা হলে এই রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় না। অর্থাৎ চুরি করলে দোষ হয় না, কিন্তু কেউ চোরকে চোর বললে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।’
মেঘমল্লারের বক্তব্যের পর টিএসসি থেকে শাহবাগ অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শাহবাগ ঘুরে আবার টিএসসিতে ফিরে শেষ হয়।