বান্দরবানে সাঙ্গুর ভাঙনে সবজির গ্রাম গোয়ালীখোলা বিলীন হওয়ার আশঙ্কা
বান্দরবান সদর ইউনিয়নে সবজির গ্রাম হিসেবে পরিচিত গোয়ালীখোলা সাঙ্গু নদের ভয়াবহ ভাঙনে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভাঙনে ইতিমধ্যে সাতটি পরিবারের বাড়ি নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। যেভাবে ভাঙন দেখা দিয়েছে, দ্রুত রক্ষার উদ্যোগ না নিলে গ্রামটি পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী।
পানি উন্নয়ন বোর্ড গত বছর থেকে ভাঙন রোধের কাজ করলেও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। কাজের গতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় লোকজন। তাদের মতে, যে গতিতে কাজ হচ্ছে, তা ভাঙন রোধ করতে পারছে না। বরং গোয়ালীখোলা গ্রাম বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।
জেলা শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে গোয়ালীখোলা গ্রামে গিয়ে সাঙ্গু নদের ভাঙনের ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। বান্দরবান সদর উপজেলায় সবচেয়ে সবজি উৎপাদন হয় বলে এটি সবজির গ্রাম হিসেবে পরিচিত। গোয়ালীখোলা-ধোপাছড়ি সড়কের সাঙ্গু নদের ওপর নির্মিত সেতুর নিচে বাঁক ঘুরে নদের স্রোত সরাসরি গ্রামের একাংশের ওপর আঘাত করছে। নদের পূর্ব তীরে গোয়ালীখোলা গ্রামের অংশে ভাঙনে পশ্চিম পাশে চন্দনাইশের দিকে চর গড়ে উঠছে। গ্রামের মসজিদ ঘাট থেকে নিচে রোজারপাড়া ঘাটা পর্যন্ত বিশাল ফাটল ধরেছে। গত বর্ষায় সাতটি পরিবারের বসতবাড়ি, বহু গাছগাছালি ভেঙে নদের গর্ভে চলে গেছে।
ঘরবাড়ি ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা মনোয়ারা বেগম জানালেন, তাঁদের বাড়ির এক অংশ বিধ্বস্ত হয়েছে। আগামী বর্ষায় হয়তো পুরো ঘর বিলীন হয়ে যাবে। শুধু তাঁদের বাড়ি নয়, নদের তীরবর্তী প্রায় ১৫০টি পরিবার মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
রফিকুল ইসলাম নামের এক বাসিন্দা বলেন, তাঁর গোয়ালঘর ও আঙিনার গাছ ভাঙনে পড়েছে। বৃষ্টির সময় ফাটলের অংশ পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়ায় কিছুটা রক্ষা পাওয়া গেছে। আগামী বর্ষায় আর ধরে রাখা যাবে না।
গোয়ালীখোলার বাসিন্দা ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, সাঙ্গু নদের তীরে প্রায় শত বছরের প্রাচীন গোয়ালীখোলা গ্রামে বাঙালি ও পাহাড়ি মিলে চার শতাধিক পরিবারের বসবাস। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নদের তীর ভাঙনে গ্রামটি ঝুঁকিতে পড়েছে। তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড যেভাবে ধীরগতিতে কাজ করছে, তাতে গ্রামটি রক্ষা করা কঠিন হবে। কাজের গতি বাড়ানো গেলে ভাঙনের হার কিছুটা হলেও কমবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী অপরূপ কুমার চক্রবর্তী জানিয়েছেন, গোয়ালীখোলা গ্রাম রক্ষায় চার দফায় এই পর্যন্ত ২৪৬ মিটার এলাকায় কাজ করা হয়েছে। এ বছর ৩০০ মিটার ভাঙন এলাকায় কাজের আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হলে পাওয়া গেছে মাত্র ৫০ লাখ টাকা। অর্থ বরাদ্দের স্বল্পতার কারণে ভাঙন রোধের কাজ দ্রুত করা যাচ্ছে না। ভাঙনপ্রবণতা রোধে সাঙ্গু নদের প্রায় এক কিলোমিটার তীরে ব্লক ও বালু-সিমেন্টের জিও ব্যাগ স্থাপন করতে হবে।