টিএসসিতে অর্থ-ওষুধ, বাকি ত্রাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রে
দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যার্ত মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য আজ রোববার চতুর্থ দিনের মতো গণত্রাণ সংগ্রহ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) বদলে আজ ত্রাণসামগ্রী জমা নেওয়া হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রে। তবে কেউ নগদ অর্থসহায়তা ও জরুরি ওষুধ দিতে চাইলে তা দেওয়া যাবে টিএসসির ফটকে স্থাপিত বুথে।
গতকাল শনিবার কর্মসূচির তৃতীয় দিনেও ত্রাণ নিতে আসা মানুষের ঢল নেমেছিল টিএসসিতে। মানুষ এত ত্রাণসামগ্রী নিয়ে এসেছিলেন যে সন্ধ্যার পর টিএসসিতে ত্রাণ রাখার আর জায়গা ছিল না। পরে রাতেই ত্রাণ সংগ্রহের ভেন্যু পরিবর্তন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রে নেওয়া হয়। তবে অর্থ ও জরুরি ওষুধ জমা নেওয়া হয় টিএসসিতেই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক লুৎফর রহমান আজ সকাল ১০টার দিকে বলেন, ‘আজ টিএসসিতে শুধু অর্থ সংগ্রহ এবং জরুরি ওষুধ সংগ্রহ চলবে। ত্রাণ সংগ্রহ চলবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেশিয়ামে (শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র)।’ সে অনুযায়ী আজ সকাল থেকে আবারও ত্রাণ সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। চলবে রাত আটটা পর্যন্ত।
এদিকে গতকাল তৃতীয় দিনে টিএসসিতে সোয়া দুই কোটি টাকার বেশি করা সংগ্রহ হয়েছে বলে জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আশরেফা খাতুন। তিনি বলেন, গতকাল সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত টিএসসি থেকে নগদ অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে সব মিলিয়ে ২ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৪৭০ টাকা। এর মধ্যে ২ টাকা ও ৫ টাকার নোট ও কয়েনের হিসাব অন্তর্ভুক্ত নয়। রাত ১০টার পরে যে অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে, সেগুলোও অন্তর্ভুক্ত নয়। এগুলো আজ গণনা করা হবে। এ ছাড়া শনিবার চেক, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যে অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে, সেই হিসাবও এখনো যোগ করা হয়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়ক জানান, গতকাল ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রমের পাশাপাশি প্যাকেজিংয়েও অংশ নিয়েছেন বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী। গতকাল দুপুরের পর থেকেই টিএসসিতে ত্রাণসামগ্রীর প্যাকেজিং শুরু করা হয়েছিল। গতকাল অন্তত ৪০ ট্রাক ত্রাণসামগ্রী ক্যাম্পাস থেকে দুর্গত এলাকাগুলোয় পাঠানো হয়েছে।
আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য আকরাম হুসাইন প্রথম আলোকে বলেন, দুই থেকে তিন হাজার শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ত্রাণ সংগ্রহ ও প্যাকেজিংয়ের কার্যক্রমে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন। দুর্গত এলাকায় কার্যক্রম সমন্বয় করতে কয়েক শ কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়েও করা হয়েছে কমিটি। সমন্বয় করে ত্রাণ সংগ্রহ ও সুষ্ঠুভাবে বণ্টনের বিষয়টির ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে।
গণরান্নার পরিকল্পনা
এর আগে দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যা শুরু হওয়ার পর গত বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণত্রাণ সংগ্রহের এ উদ্যোগের ঘোষণা দেন। আন্দোলনের সব সমন্বয়ক ও স্বেচ্ছাসেবককে নিজ নিজ জেলা-উপজেলায় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও জনসাধারণের সঙ্গে সমন্বয় করে স্বেচ্ছাসেবী দল গঠনের আহ্বান জানান বাকের। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল সবার সঙ্গে সমন্বয় করে বন্যাকবলিত মানুষের জন্য রেসকিউ অপারেশন ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এরপরই বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে ঝাঁপিয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা।
গত বৃহস্পতিবার টিএসসিতে কর্মসূচির প্রথম দিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এ উদ্যোগে বিপুল পরিমাণ ত্রাণসামগ্রীর পাশাপাশি জমা পড়ে ২৯ লাখ ৭৬ হাজার ১৭৩ টাকা। দিনভর ত্রাণ সংগ্রহের পর রাতে প্যাকেজিংয়েও অংশ নেন ছাত্রছাত্রীরা। পরে রাতেই কয়েকটি ট্রাকে করে দুর্গত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়। শুক্রবার কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা ৫০ হাজার ১৯৬ টাকা জমা পড়ে। পাশাপাশি জমা পড়ে প্রায় ৫০ ট্রাক ত্রাণসামগ্রী। প্যাকেজিংয়ের পর টিএসসি থেকে রাতে দুর্গত এলাকায় যায় ত্রাণের ট্রাক।
এ ছাড়া উদ্ধারকাজে অংশ নিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা ২০০টি স্পিডবোটে করে বৃহস্পতিবার দুর্গত এলাকায় যান বলে জানান আন্দোলনের মিডিয়া ও কমিউনিকেশন উইংয়ের সদস্য আবদুল্লাহ সালেহীন।
এখন সারা দেশে নতুন করে গণরান্না কর্মসূচির কথা ভাবছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অন্যতম সমম্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, টিএসসির কর্মযজ্ঞসহ সারা দেশে নতুন করে গণরান্না কর্মসূচি বাস্তবায়নে পরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন। আজ শুকনা খাবারের পাশাপাশি চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, আলু ও লবণ নিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।