ঢাকা-৮ আসনের অন্তর্ভুক্ত রামকৃষ্ণ মিশন সড়কের ব্রাদার্স ইউনিয়ন লিমিটেড কেন্দ্রে রহস্যজনক আচরণ করেছেন স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা। ভোট দেওয়ার পর আবার কেন্দ্রে ঢুকে ভোট দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। পরে উপস্থিত এক সাংবাদিক কেন্দ্রে ঢুকে ওই কর্মীর সামনেই নির্বাচনী কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করলে ওই যুবলীগ নেতা দ্রুত সেখান থেকে চলে যান।
আজ রোববার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ওই যুবলীগ নেতার গলায় নৌকা প্রতীকের ব্যাজ ঝোলানো ছিল। সেখানে থাকা পরিচয় অনুযায়ী তাঁর নাম মো. জুয়েল। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সদস্য।
ব্রাদার্স ইউনিয়ন কেন্দ্রে ছয় বুথে ভোটসংখ্যা তিন হাজার। বেলা ২টা পর্যন্ত সেখানে ভোট পড়ে ৭৫৩টি।
বেলা দুইটার দিকে ওই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, তেমন ভোটার উপস্থিতি নেই। ২টা ১০ মিনিটে ওই কেন্দ্রের ১ নম্বর বুথে ঢোকেন ওয়ার্ড যুবলীগের সদস্য জুয়েল। গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে উপস্থিত এক সাংবাদিক ওই বুথে ঢুকে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের বলেন, ‘এই ব্যক্তিকে (জুয়েল) আগে একবার ভোট দিতে আমি দেখেছি।’ ওই সাংবাদিক জুয়েলকে হাতের আঙুল দেখাতে বলেন। আঙুলে ভোট দেওয়ার চিহ্ন (অমোচনীয় কালি) ছিল। ওই সাংবাদিক তাঁকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের কাছে নিয়ে যেতে চাইলে তিনি দ্রুত ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যান।
জুয়েল বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জাল ভোট দিতে নয়; বরং নির্বাচনী কর্মকর্তারা চা খাবেন কি না, তা জিজ্ঞেস করতে তিনি ভোটকেন্দ্রে ঢুকেছেন। পরে তিনি দ্রুত ভোটকেন্দ্র এলাকা থেকে চলে যান। জুয়েল চলে যাওয়ার পর ওই সাংবাদিক ব্রাদার্স ইউনিয়ন কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে জুয়েলের তৎপরতার বিষয়টি অবহিত করেন।
এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বিষয়টি দেখছেন। কেউ জাল ভোট দিতে পারবে না।
সর্বোচ্চ ভোট ব্রাদার্স ইউনিয়ন কেন্দ্রে
প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঢাকা-৮ আসনের অন্তত ছয়টি কেন্দ্র ঘুরে দেখেছেন। কেন্দ্রগুলোর বাইরে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকেরা ভিড় করে থাকলেও তেমন ভোটার উপস্থিতি ছিল না। এই ছয় কেন্দ্রের পাঁচটিতে নৌকা ও ফুলের মালা প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্ট ছিলেন। অন্যটিতে ছিলেন শুধু নৌকা প্রতীকের এজেন্ট।
এই ৬ কেন্দ্রের মধ্যে বেলা ২টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানেক্স ভবন কেন্দ্রে ৪৭১টি ভোট পড়ে বলে জানান প্রিসাইডিং কর্মকর্তা দুলাল মিয়া। পুরানা পল্টনের আনন্দ ভবন কমিউনিটি সেন্টারের তিনটি কেন্দ্রের মধ্যে একটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নবীর উদ্দিন জানান, এই কেন্দ্রে মোট ২ হাজার ৩৪১ ভোটারের বিপরীতে বেলা ২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ২ শতাধিক।
দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল কেন্দ্রে ২ হাজার ৪৭৯ জন ভোটারের বিপরীতে ১০০টি ভোট পড়ে বলে জানান প্রিসাইডিং কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম। উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২ হাজার ২০৬ জন ভোটারের বিপরীতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শতাধিক ভোট পড়ে বলে জানান প্রিসাইডিং কর্মকর্তা লিটন দাস।
সব কেন্দ্রকে ছাপিয়ে সর্বোচ্চ ভোট পড়ে ব্রাদার্স ইউনিয়ন লিমিটেড কেন্দ্রে। এখানে ছয়টি বুথে মোট ভোটার ছিলেন তিন হাজার জন। বেলা ২টা পর্যন্ত ৭৫৩ জন এই কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন বলে জানান প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবুল বাশার।