প্রতে৵ক নাগরিকের ধর্মচর্চার পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে: ফরহাদ মজহার

কবি, প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্প্রীতি সমাবেশে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ডিসেম্বরছবি: প্রথম আলো

গণ-অভ্যুত্থানের পূর্ণ বিজয় এখনো আসেনি বলে মন্তব্য করেছেন কবি, প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, এমন একটা বাংলাদেশ তিনি চান, যেখানে ‘সংখ্যালঘু’ বলতে কোনো শব্দ থাকবে না। তিনি চান, রাষ্ট্র প্রতে৵ক নাগরিকের অধিকার, ব্যক্তিস্বাধীনতা, মর্যাদা ও ধর্মচর্চার পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে।

রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আজ শুক্রবার বিকেলে এক সম্প্রীতি সমাবেশে ফরহাদ মজহার এ কথাগুলো বলেন। সম্প্রীতি সমাবেশের আয়োজন করে ‘সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন। সংগঠনটি গত ১৩ আগস্ট আট দফা দাবি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পেশ করে। আজ সমাবেশে তাঁরা সেই আট দফা দাবি আবার তুলে ধরেন।

ফরহাদ মজহার বলেন, ‘এই রাষ্ট্র গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মাত্র আমরা এনেছি ঠিকই; কিন্তু এটার পূর্ণ বিজয় এখনো আমরা আনতে পারিনি।’ তাঁর মতে, এই রাষ্ট্র আসার সঙ্গে সঙ্গেই একটা সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব হয়ে গেছে। আইনের কথা বলে এই বিপ্লবকে ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে জনগণের অধিকার পূর্ণভাবে আসার কথা ছিল, পুরোনো সংবিধান বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, পুরোনো রাষ্ট্রপতি উৎখাত হয়ে যাওয়ার কথা ছিল; সেই রাষ্ট্রপতিকে রেখে দেওয়া হয়েছে, সেই আইন রেখে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে (অস্থিতিশীল) আরও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি করে শেখ হাসিনাকে আবার পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা সচেতন এবং আপনারাও সচেতন থাকবেন।’

ফরহাদ মজহার বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের একটা উদ্দেশ্য হলো এই দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা। সেগুলোর তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি যাঁরা তৈরি করছেন, তাঁরা দেশের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখছেন।’

নতুন করে বাংলাদেশকে গঠন করতে হবে, নতুন করে গঠনতন্ত্র করতে হবে উল্লেখ করেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাইকে নিয়ে নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করা হবে, যেখানে কোনো সংখ্যালঘু থাকবে না। তিনি আরও বলেন, ‘সেখানে আমরা সবাই নাগরিক এবং রাষ্ট্র আমাদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করবে। গণ-অভ্যুত্থানের পরে সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের নয় সার্বভৌমত্ব জনগণের।’

সমাবেশে বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলবার্ট পি কস্তা সমাবেশে বলেন, বিভিন্ন সময় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলা হচ্ছে, এগুলো ধর্মীয় কারণে নয়; বরং রাজনৈতিক কারণে করা হয়। তিনি বলেন, এখনো পতিত স্বৈরাচারের দোসররা তাদের স্বার্থ রক্ষা করছে, তাদের যদি সরানো না যায়, তাহলে এই সরকারের আকাঙ্ক্ষা নষ্ট হবে।

সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের পক্ষে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি লিঙ্কন দত্ত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে আপনারাও দেখেছেন বা জেনেছেন আমরা কতটা অবহেলার মধ্যে পড়েছি।...আমরা স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে বাঁচব, স্বাধীনভাবে কথা বলব; এবং পাশের দেশকে আমরা জানান দেব, আমার যা আছে, তোমারও তা আছে। কিন্তু না, আমাদের হাহাকার করে, চিৎকার করে বাঁচতে হচ্ছে—কারণ, আমরা সংখ্যালঘু।’

সমাবেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূলকথা ছিল—সবাই যেন সুবিচার পায়; কিন্তু এখনো সুবিচার প্রতিষ্ঠা হয়নি। মানব রচিত মতবাদকে বাদ দিয়ে যদি আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করা যায়, তাহলেই সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মেঘমল্লার বসু,  বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রূপাইয়া শ্রেষ্ঠা প্রমুখ। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী প্রতিনিধি সুস্মিতা কর। সঞ্চালনা করেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী প্রতিনিধি শীনন্দ দাস।

আরও পড়ুন