আবদুল্লাহ আল–মামুন ছিলেন বহুমাত্রিক প্রতিভাবান মানুষ। একাধারে নাটক লিখেছেন, অভিনয় করেছেন, নির্দেশনা দিয়েছেন, সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। টেলিভিশনে নাট্য প্রযোজনায় নিজস্ব ধারার সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু তাঁর প্রতিভার যথার্থ মূল্যায়ন করা হয়নি। তাঁকে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাও হয় না বলে আক্ষেপ করেছেন সুবর্ণা মুস্তাফা।
আজ বৃহস্পতিবার ছিল দেশের এই স্বনামধন্য নাট্যব্যক্তিত্বের ৮১তম জন্মবার্ষিকী। সে উপলক্ষে থিয়েটার আবদুল্লাহ আল–মামুন স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে। নন্দিত অভিনয়শিল্পী ও সংসদ সদস্য সুবর্ণা মুস্তাফা ছিলেন স্মারক বক্তা। বিকেল সাড়ে চারটায় শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনে এ স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করা হয়।
সুবর্ণা মুস্তাফা তাঁর বক্তৃতায় আবদুল্লাহ আল–মামুনের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণার পাশাপাশি তাঁর অবদান ও ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ আল–মামুন গভীর ভালোবাসা ও সততার সঙ্গে তাঁর কাজ করে গেছেন। তাঁর গভীর দেশপ্রেম ছিল। শিল্প ও সমাজের প্রতি ছিল তাঁর দায়বদ্ধতা। সমাজের কোন বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে হবে, কোন বিষয়টিকে শক্তিশালী করতে হবে, তা তিনি ভালোভাবে জানতেন। নাটকে সেই বিষয়গুলো তুলে আনতেন।
কর্মজীবনে আবদুল্লাহ আল–মামুন বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরকারি চাকুরে ছিলেন। সুবর্ণা বলেন, নানা সময় সরকার পরিবর্তিত হলে এই প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্যও বদলে যায়। কিন্তু আবদুল্লাহ আল–মামুন তাঁর নিজের আদর্শ ও বিশ্বাস পরিবর্তন করেননি। তিনি বলেন, গুণী এই শিল্পী অনেক অভিনয়শিল্পী তৈরি করেছেন, যাঁরা আজ খ্যাতিমান হয়েছেন। আবদুল্লাহ আল–মামুনের জন্যই আজ তিনি সুবর্ণা মুস্তাফা হয়ে উঠতে পেরেছেন উল্লেখ করে তরুণ প্রজন্মকে তাঁর আদর্শ নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
সূচনা ভাষ্যে নাট্যব্যক্তিত্ব থিয়েটারের সাংগঠনিক পরিচালক রামেন্দু মজুমদার বলেন, মামুন সমাজের অসংগতিগুলো ধরতে পারতেন। সংলাপ রচনায় অত্যন্ত পারঙ্গম ছিলেন। বড় মাপের একজন নির্মাতা ছিলেন তিনি।
অভিনয়শিল্পী কেরামত মওলা বলেন, মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র যে আলাদা মাধ্যম, প্রতিটির আলাদা অভিব্যক্তি ও স্বকীয়তা আছে, মামুন তা খুব ভালো বুঝতেন। যে কারণে তাঁর মঞ্চনাটক, টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রের ভাষা ও বৈশিষ্ট্য আলাদা। এখন অনেকেই এই স্বাতন্ত্র্য অনুভব করতে পারেন না।
নাট্যকার আবদুস সেলিম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময় ও মধ্যবিত্ত জীবনের বিচ্যুতিগুলো আবদুল্লাহ আল–মামুনের নাটকে উঠে এসেছে।
সভাপতির বক্তব্যে থিয়েটার সভাপতি অভিনয়শিল্পী ফেরদৌসী মজুমদার বলেন, শিল্পী হিসেবে আবদুল্লাহ আল–মামুনের হাতেই তিনি গড়ে উঠেছেন। অত্যন্ত প্রতিভাবান মানুষ ছিলেন। মাত্র তিন দিনে একটি সফল নাটক রচনা করতে পারতেন। নাটক অন্তঃপ্রাণ ছিলেন। অফিসে নাটক নিয়ে কাজ করেছেন। আবার বাড়িতে গিয়ে নাটক লিখতে বসেছেন, পড়েছেন। তাঁর মতো সৃজনী প্রতিভার মানুষ আর তেমন দেখা যায় না।
স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানের পর জাতীয় নাট্যশালায় ছিল আবদুল্লাহ আল–মামুনের ‘মেরাজ ফকিরের মা’ নাটকের মঞ্চায়ন। এটি ছিল এই নাটকের ২০৫তম মঞ্চায়ন, ১৯৯৫ সালে নাটকটি প্রথম মঞ্চস্থ হয়েছিল।
আবদুল্লাহ আল–মামুনের জন্ম ১৯৪২ সালের ১৩ জুলাই জামালপুরের আমলাপাড়ায়। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রযোজক, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বহু জনপ্রিয় নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও রাষ্ট্রীয় একুশে পদক। ২০০৮ সালের ২১ আগস্ট তিনি মারা যান।