রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচিত ঘোষণা নিয়ে রিট খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) খারিজ করে দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। একই সঙ্গে লিভ টু আপিলকারীকে খরচা হিসেবে এক লাখ টাকা দিতে বলা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আট সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। খরচা হিসেবে এক লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে লিভ টু আপিলকারীকে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচিত ঘোষণা করে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রজ্ঞাপন জারি করে। ইসির প্রজ্ঞাপনের বৈধতা নিয়ে পৃথক দুটি রিট হয়। পৃথক রিটের ওপর একসঙ্গে শুনানি নেন হাইকোর্ট। শুনানি শেষে গত ১৫ মার্চ হাইকোর্ট রিট দুটি সরাসরি খারিজ করে আদেশ দেন।
দুটির মধ্যে একটি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম এ আজিজ খান। ইসির প্রজ্ঞাপন নিয়ে আবদুল মোমেন চৌধুরীসহ সুপ্রিম কোর্টের ছয় আইনজীবী অপর রিটটি করেন।
গত ২৪ এপ্রিল দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিন শপথ নেন। একই দিন হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশ প্রকাশিত হয়।
হাইকোর্টের আদেশ এবং গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ইসির প্রজ্ঞাপনের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে চলতি মাসে লিভ টু আপিল করেন আইনজীবী এম এ আজিজ খান। একই সঙ্গে নতুন করে নির্বাচনের জন্য রাষ্ট্রপতি পদ খালি রাখা নিশ্চিতের আবেদন জানানো হয়।
বিষয়টি ১৫ মে শুনানির জন্য আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। আবেদনটি ভ্রান্ত ধারণাপ্রসূত উল্লেখ করে ১৫ মে চেম্বার আদালত তা (আবেদন) নামঞ্জুর করে দিয়ে লিভ টু আপিল ১৮ মে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় আজ লিভ টু আপিলের ওপর শুনানি হয়।
আজ আদালতে আবেদনের পক্ষে আইনজীবী এম এ আজিজ খান নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, যেহেতু আদালত মনে করেছেন—এ ধরনের মামলা করে রাষ্ট্রের সময় নষ্ট করা, আদালতের সময় নষ্ট করাসহ বিভিন্ন কারণে মামলার খরচ হিসেবে এক লাখ টাকা জমা দিতে বলেছেন।
আইনজীবী এম এ আজিজ খান প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত বার বার মামলা করে আদালতের সময় নষ্ট করার জন্য খরচা আরোপ করা হয়। কেন এক লাখ টাকা খরচা আরোপ করা হয়েছে, তা পূর্ণাঙ্গ আদেশ পাওয়ার পর জানা যাবে। পূর্ণাঙ্গ আদেশ পেয়ে খরচা হিসেবে ওই অর্থ পরিশোধের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
রিট খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ আদেশে বলা হয়, রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ‘দ্য অফিস অব প্রফিট’ ধারণ করেন। কিন্তু এটি প্রজাতন্ত্রের কর্মে একটি লাভজনক (অফিস অব প্রফিট) পদ নয়। রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণের পদ্ধতি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে অন্যদের নিয়োগের মতো নয়। তদুপরি প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মে নিয়োজিত কর্মচারীদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের যেসব বিধান ও নিয়ম রয়েছে, সেগুলো রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
আদেশে আরও বলা হয়, সংবিধান অনুসারে ‘নির্বাচন’ ও ‘নিয়োগ’ একই অর্থ বহন করে না। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশের ঐক্যের প্রতীক। আর সংবিধানের নবম ভাগ (বাংলাদেশের কর্ম বিভাগ) অনুসারে যাঁরা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত, তাঁরা প্রজাতন্ত্রের সেবায় নিয়োগকৃত কর্মচারী।