কৃষিতে ৪৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদনকে টেকসই করতে ও কৃষি খাতের রূপান্তরের জন্য জাতীয় কৃষিনীতি ২০১৮ বাস্তবায়ন চলছে। চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত এ খাতে ৪৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে ইতালির রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বিশ্ব খাদ্য ফোরামের ‘বিনিয়োগ সম্মেলনের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও পরবর্তী সেশনে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, ৪৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সরকারি বিনিয়োগ ৩০ হাজার ২০০ কোটি টাকা, বাকিটা উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার। এ ছাড়া সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক ও ইফাদ পার্টনার প্রকল্পে ৫ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। তারপরও এ মুহূর্তে কৃষি খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে এফএওর মহাপরিচালক কিউ দোংয়ু, চিফ ইকোনমিস্ট টরেরো কুলেনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যাংক, দাতা সংস্থা ও বেসরকারি উদ্যোক্তা প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। এ সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রুহুল আমিন তালুকদার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো. বখতিয়ার, রোমে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মনিরুল ইসলাম, ইকোনমিক কাউন্সিলর মো. আল আমিন উপস্থিত ছিলেন।
পরে মন্ত্রী কৃষিতে বিনিয়োগ উপস্থাপনবিষয়ক বাংলাদেশের নির্ধারিত সেশনে দেশের কৃষি খাতে বিনিয়োগ পরিকল্পনা, প্রয়োজনীয়তা ও সম্ভাবনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিকল্পনায় কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন ও সংগ্রহ–উত্তর ব্যবস্থাপনা, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন, ক্লাইমেট স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তি ব্যবহার এই ছয়টি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এসব খাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রয়োজন।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের অবকাঠামো ও সরকারি সুযোগ–সুবিধার বিস্তারিত তুলে ধরে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেশে বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে। বাংলাদেশে কৃষিতে বিনিয়োগ খুবই সম্ভাবনাময় এবং তা লাভজনক হবে।
বিশেষ করে আলু, পেঁয়াজ, আম, কাঁঠাল, আনারস, টমেটো—এসব পণ্যের জন্য হিমাগার স্থাপন, সংগ্রহ–উত্তর ব্যবস্থাপনা, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণনে দ্রুত বিনিয়োগ কামনা করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশে পেঁয়াজ, আম, টমেটোসহ শাকসবজি সংরক্ষণের এখনো তেমন প্রযুক্তি নেই, হিমাগার নেই। এ ছাড়া এসব পণ্য সংগ্রহোত্তর পর্যায়ে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য দ্রুত ২০০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ১ হাজার ১০০টি বহুমুখী হিমাগার স্থাপনে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, কৃষি খাতের রূপান্তরে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে কাজ করছে এফএও। এ জন্য এফএও ১৭-২০ অক্টোবর পর্যন্ত চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। এ সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ৩২টি দেশ অংশগ্রহণ করছে, যাদের কৃষি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বেশি প্রয়োজন। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক, আরব ব্যাংক, আন্ত–আমেরিকান উন্নয়ন ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, লাতিন আমেরিকা উন্নয়ন ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যাংক, দাতা সংস্থা ও বেসরকারি উদ্যোক্তা প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করছে।