তথ্যাদি চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে: চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে আহত–নিহতের তালিকা, চিকিৎসা ও দাফনের বিষয়ে তথ্যাদি চেয়ে দেশের সব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন ও সরকারি–বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে চিঠি পাঠানোর কথা জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘মূলত তদন্তের সূচনালগ্নে প্রাথমিক যে বিষয়গুলো দরকার, সেগুলো আমরা সংগ্রহ করার জন্য চিঠি দিয়েছি। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক তদন্তের যে যাত্রা সেটি আমরা শুরু করেছি।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভবনের সামনে আজ সোমবার দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম এসব কথা বলেন। এ সময় প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম উপস্থিত ছিলেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের সব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, সব সিভিল সার্জন, সব সরকারি হাসপাতালের প্রশাসনে যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে, সেখানে কী কী ঘটনা ঘটেছে। চিঠিতে অনুরোধ জানিয়েছি হাসপাতালে আহত–নিহত কতজন মানুষ গিয়েছিলেন, কতজন চিকিৎসা নিয়েছেন, কতজন মারা গিয়েছেন, সে–সংক্রান্ত চিকিৎসার যত ডকুমেন্ট, সেগুলো তদন্ত সংস্থায় সরবরাহ করার জন্য। পুলিশ সুপারদের অনুরোধ করা হয়েছে যে তাঁদের এলাকার মধ্যে কতগুলো ঘটনা ঘটেছে, কত মামলা হয়েছে, কারা কারা সম্ভাব্য আসামি ও কারা কারা ভুক্তভোগী, সেসবের তালিকা দিতে।’
জুলাই–আগস্ট বিপ্লব নিয়ে ক্যামেরায় ধারণ করা ডকুমেন্ট ও প্রতিবেদনের অনুলিপি সরবরাহ করার জন্য সব মিডিয়া হাউসের (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া) প্রশাসনে যাঁরা আছেন, তাঁদের কাছে চিঠি পাঠানোর কথাও জানান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
সম্মিলিতভাবে তদন্ত সংস্থাকে সহায়তা করার জন্য সমন্বয়ক ও ছাত্রনেতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘শিগগিরই ছাত্রনেতাদের বা সমন্বয়কদের আমাদের এখানে আসার আহ্বান জানাব। তাদের কাছে যেসব তথ্য–প্রমাণ আছে, এগুলো সংগ্রহের ব্যাপারে তারা কীভাবে সহযোগিতা করবে, সে বিষয়গুলো নির্ধারণের জন্য তাদের এখানে আমন্ত্রণ জানাব।’
‘রাজনৈতিক অভিলাষ নেই’
এক প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান সরকার কোনো রাজনৈতিক সরকার নয়। এই সরকার এসেছে রাষ্ট্র কাঠামো ঠিক করে দেওয়ার জন্য। এই বিচারপ্রক্রিয়া দীর্ঘ হলে এই সরকারের পুনর্নির্বাচিত হওয়ার কোনো কারণ নেই, সম্ভাবনাও নেই। সুতরাং এই সরকারের কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ থাকতে পারে না, নেই বলেই আমরা জানি। বিচারকে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশে হাসিলের জন্য ব্যবহার করা হবে না—এটি আমরা আজকে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে জাতির কাছে পরিষ্কার করতে চাই। এই বিচারের পেছনে কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নেই। এটা নিছকই ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অভিলাষ।…এই যে আহত–নিহত পরিবারের যে কান্না, সেটি প্রতিকার করার প্রয়াস, এর বাইরে আর কিছু নেই এর মধ্যে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়ে অপরাধটা হয়েছে। পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র, পুরো প্রশাসনযন্ত্র এই অপরাধের সঙ্গে অধিকাংশ জড়িত ছিলেন। সুতরাং এই তদন্ত শেষ করতে একটা যৌক্তিক সময় লাগবে। তবে এই সময়টা যাতে খুব বেশি না হয়, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করব। বিচারের সবকিছু এভিডেন্স তাজা থাকতেই আমরা তদন্ত শেষ করব এবং সেটি বিচারপ্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসব।…তবে প্রয়োজনের চেয়ে এক দিন বেশি নেওয়া হবে না। আমরা চেষ্টা করব দিনরাত্রি কাজ করতে। জাতির প্রতি এটি আমাদের অঙ্গীকার।’
‘ন্যায়বিচার নিশ্চিতে যা যা করা দরকার, তাই করা হবে’
আসামিপক্ষে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি আসামিপক্ষ তাদের বেস্ট ডিফেন্স দেওয়ার জন্য আইনজীবী চান—সেটি দেশি হোক, বিদেশি হোক আমাদের পক্ষ থেকে আপত্তি থাকার কোনো কারণ নেই।...তারা যে ধরনের আইনজীবী চান, সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত হলে আমাদের পক্ষ থেকে আপত্তি থাকবে না। যাতে কোনো আসামি না বলতে পারেন যে বিচারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে তাঁর এই সমস্যা ছিল, ওই সমস্যা ছিল, যে কারণে তিনি ন্যায়বিচার পাননি। এটা যাতে বলতে না পারেন, সে বিষয়ে সরকারও সচেতন আছে, প্রসিকিউশন টিম হিসেবে আমরাও সচেতন আছি। মনে করি বিচার শেষ হওয়ার পরে আসামিপক্ষ এবং বাদীপক্ষ, দুই পক্ষই যে বলে এখানে সুবিচার হয়েছে। কারও প্রতি কোনো অন্যায় করা হবে না, কিন্তু কোনো অপরাধে ছাড়ও কাউকে দেওয়া হবে না—এটা আমাদের পরিষ্কার বার্তা। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য যা যা করার দরকার, তাই করা হবে।’
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো গোপনীয়তা নেই যে রায় নিজেদের মতো করে বানিয়ে দিতে হবে, মিথ্যা কথা বলে তদন্ত সাজাতে হবে—প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের অধিকাংশ এই ঘটনাগুলোর লাইভ উইটনেস। বাংলাদেশের সবার চোখের সামনে অপরাধ ঘটেছে, যা ঘটেছে, যাদের চোখের সামনে ঘটেছে, প্রত্যেকে এসে সাক্ষী দেবেন, তাতে বিচারের রায় যা হওয়ার তা হবে। আমরা কাউকে কোনো অধিকার বঞ্চিত করতে চাই না। সম্পূর্ণ ফেয়ার ট্রায়াল নিশ্চিত করার জন্য প্রসিকিউশন কাজ করবে।’
আজ বিকেলে নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল পরিদর্শনে যান চিফ প্রসিকিউটর। এ সময় প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম ও বি এম সুলতান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।