ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অপরাধের ক্ষেত্রে শাস্তির মাত্রা বৃদ্ধি করা এবং এগুলো অজামিনযোগ্য গণ্য করা আবশ্যক বলে এক রায়ে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, আগে এ ধরনের অপরাধ অজামিনযোগ্য ছিল। এটা অজামিনযোগ্য হওয়াই যুক্তিযুক্ত।
‘মো. সেলিম খান বনাম রাষ্ট্র’ শীর্ষক এক ফৌজদারি বিবিধ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ এসেছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে সাইবার নিরাপত্তা আইনে করা এক মামলায় গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট ওই রায় দেন। আসামি মো. সেলিম খানের আবেদন নিষ্পত্তি করে বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেন। পূর্ণাঙ্গ রায়টি ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
বিবেচ্য বিষয় উল্লেখ করে পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, আসামির (সেলিম খান) অবমাননাকর বক্তব্যটি তাঁর স্বাভাবিক জীবনযাপন বা ব্যক্তিগত সমৃদ্ধি বা কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের জন্য আদৌ প্রয়োজন ছিল না। ফলে কোরআন এবং মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)– কে লক্ষ্য করে এসব অপ্রয়োজনীয়, বিবেকবর্জিত, ধৃষ্টতামূলক ও উসকানিমূলক অশালীন বক্তব্য ও আচরণের জন্য মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মতো শাস্তির বিধান থাকা বাঞ্ছনীয়, যা সংসদ বিবেচনা করে দেখতে পারে।
বাংলাদেশ সব ধর্মমতের মানুষের দেশ উল্লেখ করে পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত বলেছেন, একই সঙ্গে সব ধর্মের মানুষের নিরাপত্তা, স্বচ্ছন্দ বসবাস, সম্মান–মর্যাদা রক্ষা ও সমাজে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। যেকোনো ধর্মের মানুষের মনে আঘাত দিতে পারে বা তাদের কারও মনে ভয়ভীতি, আতঙ্ক, অস্বস্তি বা আশঙ্কার সৃষ্টি করতে পারে—ধর্মকে কেন্দ্র করে এ ধরনের যেকোনো উসকানিমূলক বক্তব্য নিরুৎসাহিত করার জন্য এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে শাস্তির মাত্রা বৃদ্ধি করার এবং এগুলোকে অজামিনযোগ্য গণ্য করা আবশ্যক। আগে এ ধরনের অপরাধ অজামিনযোগ্য ছিল। এটা অজামিনযোগ্য হওয়াই যুক্তিযুক্ত।
আইনজীবীদের তথ্য অনুযায়ী, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থানায় গত বছরের নভেম্বরে সেলিম খান নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনের চারটি (২৫, ২৮, ২৯ ও ৩১) ধারায় মামলা হয়। সেদিনই গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ফেসবুকে নাফিসা চৌধুরী নামের এক নারীর একটি পোস্টকে (মন্তব্য) কেন্দ্র করে। ওই পোস্টে মহানবী (সা.) সম্পর্কে সেলিম খান অবমাননাকর মন্তব্য করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। এই মামলায় কুষ্টিয়ার আদালতে জামিন চেয়ে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর বিফল হন সেলিম খান। পরে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন তিনি। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গত ১২ মার্চ রায় দেন আদালত। রায়ে রাষ্ট্রপক্ষে, ঢাকার জেলা প্রশাসকের অনূকূলে ২৫ লাখ টাকা ব্যাংক গ্যারান্টি আকারে সংশ্লিষ্ট আদালতে জামানত রাখার শর্তে সেলিম খানকে জামিন দেওয়া হয়।
আদালতে তখন সেলিম খানের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী আবদুল্লাহ আল নোমান। যোগাযোগ করা হলে তিনি আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ১৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের প্রত্যায়িত অনুলিপি ইতিমধ্যে পেয়েছেন। জামিনযোগ্য অপরাধ হওয়া সত্ত্বেও সেলিম খানের জামিন পেতে দীর্ঘ সময় লেগেছে। ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া নাফিসা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলার নথিতে অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততার সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকায় তাঁকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দিতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।