লেবানন থেকে প্রথম ধাপে দেশে ফিরলেন ৫৪ বাংলাদেশি
যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে লেবানন থেকে আজ সোমবার প্রথম ধাপে দেশে ফিরেছেন ৭ শিশুসহ ৫৪ প্রবাসী বাংলাদেশি। বিকেল ৫টা ৫৫ মিনিটে তাঁদের বহনকারী সৌদি এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি অবতরণ করেন। আগামী বুধবার আরও ৬৫ জনের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এদিকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, সেখান থেকে যাঁরা ফিরতে চান, তাঁদের সবাইকে ফিরিয়ে আনা হবে।
লেবানন থেকে স্ত্রী আর সন্তান নিয়ে দেশে ফিরেছেন নরসিংদীর মোহাম্মদ হোসাইন। তিনি সাত বছর আগে সেখানে গিয়েছিলেন। স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলেন তিন বছর আগে। তাঁদের ১১ মাস বয়সী সন্তান মাহাদির জন্ম লেবাননেই।
মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘আমি ১৫ দিন ধরে স্ত্রী–সন্তান নিয়ে সাগরপারে ছিলাম। সেখানে এখন খুব ঠান্ডা পড়ছে৷ খুব বাতাস, খুব খারাপ অবস্থা। যত দ্রুত সম্ভব, যারা দেশে ফিরতে চায়, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হোক।’ সরকারের কাছে তিনি লেবানন থেকে ফেরত আসা ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের দাবি জানান।
সেখানকার পরিস্থিতি জানিয়ে মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘আমি যেখানে থাকতাম, সেই ভবনের পাশের চার-পাঁচটি ভবন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। বোমার বিকট শব্দে থাকা যায় না। হৃৎপিণ্ড সব সময় লাফাতে থাকে। ইসরায়েলি বিমান সব সময় আকাশে উড়তে থাকে। কখন বোমা ফেলে এ নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। লেবাননের এমন কোনো জায়গা নেই, যেটা নিরাপদ।’
এদিকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে লেবানন থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ফেরানোর সরকারি উদ্যোগ জানাতে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিআইপি লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, লেবানন থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ফেরাতে সব উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের ফিরিয়ে আনার খরচ সরকার বহন করবে। যাঁরা ফিরতে চান, তাঁদের সবাইকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, লেবাননে এক লাখের মতো বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছেন। তাঁর মধ্যে ১ হাজার ৮০০ জন দেশে ফিরে আসার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। এ সংখ্যা বাড়তে পারে, আবার কমতেও পারে। বাংলাদেশ সরকার আইওএমের সহযোগিতায় বিনা খরচে এই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের দেশে ফিরিয়ে চেষ্টা করছে।
খরচের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘তাঁদের সহায়তা দিতে আমাদের ইতিমধ্যে ১৭ কোটি ৫৫ লাখ খরচ হয়েছে। এর মধ্যে খাদ্যসহায়তা বাবদ ৫৫ লাখ খরচ হয়েছে।’ আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) তাদের খরচে ২০০ জনকে নিয়ে আসবে বলেন তিনি জানান।
আইওএম বাংলাদেশ মিশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নুসরাত গারজালি উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, আইওএম অনেক দেশ থেকেই বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করে যাচ্ছে। লেবাননেও অপ্রত্যাশিত একটা পরিস্থতি সৃষ্টি হয়েছে। তাই সেখান থেকে এ দেশের মানুষদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে আইওএম কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, আজকে যে ৫৪ জন এসেছেন, তাঁদের আইওএমের পক্ষ থেকে খাদ্যসহায়তা ও ৫ হাজার করে টাকা দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের মানসিক সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আইওএমের পক্ষ থেকেও বৈধ কাগজপত্রহীন বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার কাজ করা হচ্ছে।