'পাগল' জাকির এখন জীবাণুনাশক ছিটান
প্রথম দিকে হ্যান্ড মাইক নিয়ে করোনাভাইরাস বিষয়ে এলাকাবাসীকে সচেতন করেন জাকির মণ্ডল। আর এখন এলাকার মসজিদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জীবাণুনাশক পানি ছিটাচ্ছেন তিনি।
ফরিদপুর সদরের কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মণ্ডল পাড়া গ্রামে জাকিরের বাড়ি। তাঁর পুরো নাম মো. জাকির হোসেন মণ্ডল (৪১)। তিনি একজন ভুসিমাল ব্যবসায়ী। তিনি বিবাহিত, দুই মেয়ে ও এক ছেলের বাবা। একই গ্রামের মৃত সোবাহান মণ্ডলের ছেলে তিনি।
গত ১০ মে জীবাণুনাশক পানি ছিটানোর কাজ শুরু করেন জাকির। এর আগে গত ২৭ মার্চ থেকে তিনি একটি হ্যান্ড মাইক নিয়ে করোনভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে প্রচার চালান।
এমন কাজ করায় প্রথম প্রথম এলাকাবাসী তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা করতেন। ডাকতেন 'পাগল' বলে। তবে এক সময় এলাকার মানুষ বুঝতে পারেন জাকিরের কাজের গুরুত্ব। এখন আর এলাকায় কেউ জাকিরকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেন না। বরং তাঁর কাজে অনেকে সাহায্য করেন। কোনো প্রয়োজন হলে এগিয়ে আসেন। গত ১০ মে থেকে ১৮ মে পর্যন্ত ওই ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডের অন্তত ৬০টি মসজিদ ও ৩৫টি মন্দিরে তিনি জীবাণুনাশক পানি ছিটিয়েছেন।
কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের ডাঙ্গীরপাড় জামে মসজিদের ইমাম মো. শাহজাহান (৫৫) বলেন, 'মসজিদ এবং এর আশপাশের এলাকা জীবাণুমুক্ত করা জরুরি। যে কাজ আমাদের নিজেদের করার কথা ছিল, সেই কাজ জাকির করে দিয়েছে। ওর এই উদ্যোগে সাধুবাদ না জানিয়ে পারা যায় না।'
রাধা গোবিন্দ মন্দিরের সেবায়েত লিটন মণ্ডল (৪৮) বলেন, 'আমরা মন্দিরের পরিবেশের দিকে তাকাইনি। কিন্তু জাকির তাকিয়েছে। জাকির যা করেছে তা এ সময়ের জন্য একটি মহৎ উদ্যোগ।'
মসজিদ মন্দিরের পাশাপাশি ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর, গোবিন্দপুর ও মাধবপুর এলাকার তিনটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রেও তিনি ছিটিয়েছেন জীবাণুনাশক পানি। এ কাজে তিনি কারও কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নেননি। নিজে থেকেই খরচ করছেন। ব্লিচিং পাউডার, ডিটারজেন্ট, স্যাভলন তিনি নিজেই কেনেন। মোটরসাইকেলে করে যাতায়াতের জন্য যে তেল প্রয়োজন হয়, সেটাও নিজের টাকায় কেনা।
এ কাজের পাশাপাশি তিনি মাধবপুর গুচ্ছগ্রামে অবস্থিত ৩০টি পরিবারকে চাল, ডাল, তেল, লবণসহ এক মাসের খাবার সরবরাহ করেছেন। এ ছাড়া ঈদ উপলক্ষে এলাকার ২০০ গরিব পরিবারের মধ্যে চিনি, সেমাই, গুঁড়া দুধ ও সাবান বিতরণ করেছেন। এসব কাজ তিনি করছেন তাঁর নিজের উদ্যোগে। এলাকায় তাঁর মালিকানাধীন ২৭ শতাংশ জমি বন্ধক রেখে এ খচর নির্বাহ করছেন।
জাকির হোসেন মণ্ডল বলেন, দেশ এক কঠিন সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছি। প্রতিনিয়ত প্রাণহানি ঘটছে। এ অবস্থায় নিজেদের সচেতনতার পাশাপাশি আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। নিজেকে বাঁচাতে, সমাজকে রক্ষা করতে দেশের সর্বনাশ রোধ করতে সবাইকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।
কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, 'জাকির মণ্ডল এলাকাবাসীকে রক্ষা করার জন্য গত ২৭ মার্চ থেকে কাজ করে যাচ্ছে। এলাকাবাসীকে সচেতন করার পাশাপাশি পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখায় ভূমিকা রাখছে। তাঁর মতো যদি আরও অনেকে এগিয়ে আসেন, তাহলে করোনাভাইরাসজনিত সংকট আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব।'
৪ মে প্রথম আলোয় 'সেই পাগল জাকিরের কাজ এখন তুলনাবিহীন' শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর তাঁর সামাজিক কাজ সম্পর্কে অনেকে জানতে পারেন। একই সঙ্গে তাঁর এসব কাজের প্রশংসাও করেছেন অনেকে।