বর্ষা মৌসুম শুরুর পর থেকেই টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় যমুনা নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। বিলীন হয়ে যাচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। এখন ভিটেমাটি হারিয়ে সাড়ে সাত শতাধিক পরিবার অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পরই উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের পাইকশা ও মাইঝাইল গ্রামের বাকি অংশ সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে।
এ ছাড়া তেবাড়িয়া পশ্চিম ও খাসঘুনিপাড়া গ্রামের অর্ধেকের বেশি বিলীন হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দপ্তিয়র ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর, বাককাটারি, টাটিনিশ্চিন্তপুর, ছিনকিবাড়ি, দপ্তিয়রসহ কয়েকটি গ্রাম এবং ধুবুরিয়া ইউনিয়নের বলরামপুর ও বাদেকাফনা গ্রামে ব্যাপক ভাঙনের শিকার হয়েছে।
মানুষ আশ্রয় নিয়েছে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায়। কেউ কেউ সরকারি জমি বা রাস্তার পাশে অস্থায়ী ঘর তুলে বসবাস করছেন। ঘুনিপাড়া আবদুর রশিদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে আশ্রয় নিয়েছে পাইকশা, মাইঝাল গ্রামের নদীভাঙনের শিকার কয়েকটি পরিবার। সেখানে গিয়ে কথা হয় আশ্রয় নেওয়া জাকির হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, তিন মাস আগে বাড়ি ভাঙার পর পরিবার নিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। কোনোভাবে তাদের দিন কাটছে।
নদীতে বাড়িঘর ভাঙার আগেই অনেকে ঘরবাড়ি ভেঙে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। হাটাইল গ্রামের সোলায়মান সরকার জানান, তাঁর বাড়ির কাছে নদী চলে এসেছে। যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে যাবে। তাই ঘরবাড়ি ভেঙে নৌকায় এসেছেন সলিমাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ঘাটে। সেখান থেকে ট্রাকযোগে চলে যাচ্ছেন মানিকগঞ্জের আত্মীয় বাড়িতে।
চরসলিমাবাদ গ্রামে বাড়িঘর হারিয়ে বাবুল হোসেন ও তাঁর বড় বোন বৃদ্ধা ফুল ভানুর পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বেকরা গ্রামে রাস্তার পাশে। বাবুল জানান, দুই পরিবার ৯ দিন ধরে তাঁবু টানিয়ে বাস করছে। তাঁরা কেউ কোনো ত্রাণসহায়তা পাননি।
সলিমাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম খান জানান, ভাঙনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সলিমাবাদ ও দপ্তিয়র ইউনিয়নের জন্য পাঁচ টন করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এ চাল বিতরণ করা হবে। তাঁর ইউনিয়নের পাইকশা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া সলিমাবাদ পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাকা ভবন হুমকির মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া ইউনিয়নের ৩৪০টি বাড়ি বিলীন হয়েছে।
দপ্তিয়র ইউপির চেয়ারম্যান ফিরোজ সিদ্দিকী জানান, এই ইউনিয়নের বাজুয়ারটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া নিশ্চিন্তপুর গ্রামে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি কওমি মাদ্রাসা হুমকির মধ্যে রয়েছে। এ ইউনিয়নের প্রায় ৪০০ পরিবার নদীভাঙনে গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
এ ছাড়া ধুবুরিয়া ইউনিয়নের বলরামপুর ও বাদেকাফনা গ্রামে নদী ভাঙছে। এ দুই গ্রামের ১৫টি পরিবার এ বছর গৃহহীন হয়েছে। ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা না হলে মানচিত্র থেকে নাগরপুরের চরাঞ্চলের গ্রামগুলো হারিয়ে যাবে।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করা হয়েছে।