বাচ্চাটা মায়ের পায়ে পায়ে ঘুরছে। এ জন্য থামতে পারছে না। তার মা–ও এক জায়গায় দাঁড়াতে পারছে না। অনবরত একদিক থেকে ছুটে আরেক দিকে যাচ্ছে। তার সঙ্গে ১০-১২ দিন বয়সী বাচ্চাটিও। আর পেখম গুটিয়ে ওপরের মাচায় উঠে বসে রয়েছে বাবা। রাজশাহীর এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় ময়ূরীর বাচ্চা ফুটেছে। ৪৭ বছরের এই চিড়িয়াখানায় প্রথমবারের মতো ময়ূরীর বাচ্চা ফুটল।
চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, এই চিড়িয়াখানার কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৭২ সালে। প্রায় ৩৩ একর আয়তনের উদ্যানটিকে জেলা পরিষদের কাছ থেকে ১৯৯৬ সালের ২৬ নভেম্বর রাজশাহী সিটি করপোরেশন গ্রহণ করে। বর্তমান রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে এটি পরিচালিত হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা যায়, খাঁচার সামনে দর্শনার্থীরা ভিড় করে আছে আর ময়ূরী অপরিসর খাঁচাটির একদিক থেকে দৌড়ে আরেক দিকে যাচ্ছে। মুরগির বাচ্চার মতোই ছোট্ট বাচ্চাটি মায়ের সঙ্গেই দৌড়াচ্ছে। দর্শনার্থীরা কেউ কেউ খাঁচার ভেতরে আঙুল ঢুকিয়ে দিচ্ছে। খাঁচার ভেতরে ডিমের খোসা ও এক পাশে দেওয়া গমের দানার মতো খাবার পড়ে রয়েছে। তারা খাবারে মুখ না দিয়ে শুধুই ঘোরাঘুরি করছে।
বাচ্চা ফোটার আগে খাঁচার এক পাশে বাচ্চা ফোটাতে ময়ূরীর জন্য খড় দিয়ে জায়গা করে দেওয়া হয়েছিল। আর ময়ূর একটু উঁচু জায়গায় উঠে বিশ্রাম নিতে পছন্দ করে, সে জন্য তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল একটি মাচা। সেই মাচার এক পাশে খড় বিছিয়ে দেওয়া রয়েছে। সেখানে উঠে পেখম গুটিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিল ময়ূরটি। কয়েকজন দর্শনার্থী ছবি তোলার জন্য খাঁচায় বাড়ি দিতেই ময়ূরটি ওপর থেকে ঝাঁপ দিয়ে নিচে নামল। সে–ও একই রকম করে দৌড়াদৌড়ি করতে লাগল। কিন্তু লম্বা পেখমের কারণে ছোট্ট ঘরে সে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাঘুরি করতে পারছে না। খাঁচার ওপরে দুপুরের টানা রোদ পড়েছে। কর্তৃপক্ষ রোদ ঠেকানোর জন্য একাংশে চটের পর্দা দিয়েছে।
চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. ফরহাদ উদ্দিন জানান, ২০১৭ সালের আগস্টে ঢাকা চিড়িয়াখানার সঙ্গে ঘড়িয়াল বিনিময় করতে গিয়ে উপহার হিসেবে রাজশাহী চিড়িয়াখানাকে এই ময়ূর জোড়া দেওয়া হয়। সাধারণত এদের বয়স তিন বছর হলে এরা ডিম দেওয়ার উপযুক্ত হয়। একসঙ্গে চার থেকে ছয়টা পর্যন্ত ডিম দেয়। ডিম ফুটে বাচ্চা উঠতে মুরগির মতোই ২৮ দিন সময় লাগে। গত শীতের মধ্যে ময়ূরী একটি ডিম দিয়েছিল। তখন নিজেই ঠুকরে ডিমটি নষ্ট করে ফেলে। তারপর থেকে তাঁরা নজর রাখছিলেন। এবার ডিম দেওয়ার সময় হলেই তারা খড় বিছিয়ে ডিম দেওয়ার জায়গা করে দেন। দুটি ডিম দিয়েছিল। একটা থেকে বাচ্চা উঠেছে। আরেকটি ডিম নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি স্বীকার করেন, এদের খাঁচাটি বড় হওয়া দরকার। এ বিষয়ে তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে লিখেছেন। ময়ূরের জন্য পাখিবান্ধব একটা নিরিবিলি পরিবেশ দিতে পারলে আরও ভালো সাফল্য আসবে। দর্শনার্থীদের দূর থেকে দেখার ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো হতো। বাচ্চাটি মাদি না মদ্দা জানতে চাইলে ফরহাদ উদ্দিন বলেন, তা এখনো যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ভেতরে ঢুকলে মা ময়ূর আক্রমণ করছে। এ জন্য বাচ্চাটি ধরে পরীক্ষা করা যায়নি। পাঁচ–ছয় মাস গেলে বোঝা যাবে।