রংপুর সিটি করপোরেশন
৪২ কোটি টাকার সড়কবাতি, ২ মাসেই আলো গেছে কমে
কাজের মেয়াদ গত ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে। কাজ হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ। সিটি কর্তৃপক্ষ ত্রুটিপূর্ণ এসব বাতি অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে।
সড়কবাতি লাগানোর দুই মাস যেতে না যেতেই আলো কমে গেছে। নগরকে আলোকিত রাখতে রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় জার্মানির তৈরি সড়কবাতি লাগানোর কথা। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের তৈরি বাতি লাগিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সিটি করপোরেশন।
এসব বাতি অপসারণের জন্য ইতিমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগিদ দিয়েছে সিটি করপোরেশন। ঠিকাদারের দাবি, এসব বাতি জার্মানিরই। এ নিয়ে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছে। এখন ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কবাতি স্থাপন নিয়ে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্র আরও জানায়, ৩৩ ওয়ার্ড এলাকায় ৬ হাজার ৬০০ বৈদ্যুতিক খুঁটি ও ৭ হাজার ৭০০টি এলইডি বাতি লাগানোর কথা। প্রতিটি বাতি ৩৬ থেকে ৬০ ওয়াট হওয়ার কথা। বৈদ্যুতিক বাতিগুলো জার্মানি অথবা ফ্রান্সের তৈরি হতে হবে—দরপত্রে তেমনটি উল্লেখ আছে।
সে অনুযায়ী, গত বছরের জুন মাসের মধ্যে শহরের প্রধান সড়কে এসব এলইডি বাতি লাগানো হয়। আলো ঝলমল হয়ে ওঠে পুরো শহর। মানুষজন ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারও চালায় তখন। কিন্তু দুই মাস যেতে না যেতেই এসব বাতির আলোর উজ্জ্বলতা কমে আসতে থাকে। জনমনে প্রশ্ন দেখা দেয়। বাতির আলো কমে যাওয়া নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় নগরবাসীর মনে। নগরে ইতিমধ্যে ৫০ শতাংশ খুঁটি স্থাপন ও বাতি লাগানোর কাজ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে।
‘এসপিডি’ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এই একটি ডিভাইস, যা বাতির জন্য খুবই উল্লেখযোগ্য। এটি বজ্রপাত নিরোধক হিসেবে কাজ করে। কিন্তু এটি লাগানো হয়েছে চীনের তৈরি। টেকসই খুব একটা হবে না। এটি হতে হবে জার্মানি কিংবা ফ্রান্সের। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তা করা হয়নি।
সম্প্রতি সরেজমিনে শহরের শাপলা চত্বর, কাচারিবাজার, মেডিকেল মোড়, পায়রা চত্বর, কলেজ রোড, জাহাজ কোম্পানী মোড় প্রেসক্লাব চত্বর, টাউন হল চত্বরসহ আরও কিছু এলাকায় দেখা গেছে, সড়কবাতির আলো এখন আগের মতো জ্বলজ্বল করে না। আলো কিছুটা কমে গিয়ে মাঝারি ধরনের আলো ছড়াচ্ছে। অথচ গত বছরের মাঝামাঝি সময় এসব বাতি যখন লাগানো হয়, তখন পুরো শহর যেন আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল।
বিষয়টি সিটি করপোরেশনের নজরে এলে তারা বাতিগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে পায়, এসব বাতি জার্মানি কিংবা ফ্রান্সের নয়, চীনের তৈরি। শেষ পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান গত বছরের ২৫ অক্টোবর এবং চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি দুটি চিঠি দিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সব এলইডি বাতি অপসারণের নির্দেশ দেয়। গত ১০ জানুয়ারির চিঠিতে বাতিগুলো অপসারণের সাত দিন সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও এখনো সেগুলো রয়ে গেছে।
দুটি চিঠিতেই উল্লেখ করা হয়েছে, সরবরাহকৃত এলইডি বাতিতে দেখা যায়, বাতির গায়ে কোনো ব্র্যান্ড, ভোল্টেজ, রেঞ্জ, ওয়াট, কান্ট্রি অব অরিজিন, লুমেন, লাইফটাইম সম্পর্কে কোনো তথ্য উল্লেখ নেই। তা ছাড়া বাতির ‘এসপিডি’ (সার্স প্রটেকশন ডিভাইস)–এর গায়ে ‘মেড ইন চায়না’ লেখা দেখা যায়।
‘এসপিডি’ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এই একটি ডিভাইস, যা বাতির জন্য খুবই উল্লেখযোগ্য। এটি বজ্রপাত নিরোধক হিসেবে কাজ করে। কিন্তু এটি লাগানো হয়েছে চীনের তৈরি। টেকসই খুব একটা হবে না। এটি হতে হবে জার্মানি কিংবা ফ্রান্সের। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তা করা হয়নি।
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরও বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা বাতি দরপত্রবহির্ভূত। সে কারণে বাতি অপসারণ করতে বলা হয়েছে। আমরা দুই দফায় চিঠি দেওয়ার পরও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তারা। তবে বৈদ্যুতিক বাতি ছাড়া খুঁটি স্থাপনসহ বাকি খরচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ করা হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লাগানোর আগে বাতিগুলো ঠিকাদারের কাছ থেকে পরীক্ষা করে নেওয়া হয়নি।
বাতিগুলো চীনের তৈরি এবং তা অপসারণের চিঠি প্রসঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এডেক্স করপোরেশন লিমিটেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক জুবায়ের বিন রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব বাতি জার্মানির। আসলে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছে। বাতির ভেতরে যে “এসপিডি” রয়েছে, সেটি আসলে চীনের তৈরি। তা থাকতেই পারে। এটি পরিবর্তন করে দেওয়ার জন্য সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু করপোরেশনের পক্ষ থেকে এখনো সন্তোষজনক সাড়া পাওয়া যায়নি।’
বাতিগুলো লাগানোর পর শহর যেমন আলোময় হয়ে ওঠে, সেই আলো ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে—এমন এক প্রশ্নের উত্তরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এই কর্মকর্তা বলেন, এটি এলইডি বাতির বৈশিষ্ট্য। এখন পর্যন্ত সিটি এলাকায় প্রায় ৫০ শতাংশ এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন করে এসব বাতি লাগানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাতিগুলো লাগানোর সময় সেভাবে দেখা হয়নি। পরে জানতে পারলাম, এসব বাতির ভেতর লেখা রয়েছে চীনের তৈরি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বাতিগুলো অপসারণের জন্য দুটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখানে আর অন্য কথা থাকতে পারে না।’