৩০ বছর ধরে ১ টাকায় শিঙাড়া বিক্রি

৩০ বছর ধরে এক টাকায় শিঙাড়া বিক্রি করেন ছলেমান হোসেন। শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা শহরের সরদার পাড়ায়
প্রথম আলো

মুচমুচে শিঙাড়া অনেক ভোজনরসিকের প্রিয়। আর সেই শিঙাড়া প্রতিটির দাম যদি হয় এক টাকা, তবে তো খাওয়ার মজাই আলাদা। এক টাকার শিঙাড়া ফেরি করে বিক্রি করেন ছলেমান হোসেন। বর্তমান সময়ে আলু, পেঁয়াজ ও মরিচের দাম ঊর্ধ্বমুখী হলেও তাঁর শিঙাড়ার দাম বাড়েনি। ছলেমান হোসেন বলেন, টানা ৩০ বছর ধরে এক টাকা দরে শিঙাড়া বিক্রি করে আসছেন তিনি।

৭০ বছর বয়সী ছলেমান হোসেনের বাড়ি কুষ্টিয়ার পোড়াদহে। প্রায় পাঁচ দশক ধরে শিঙাড়া বিক্রি করেন তিনি। এই ব্যবসা দিয়েই চলে তাঁর জীবন-জীবিকা। স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে ছলেমানের পরিবার। দুই ছেলের আলাদা সংসার। বর্তমানে মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর বসবাস।

১৯৭২ সাল থেকে শিঙাড়ার ব্যবসা করেন ছলেমান হোসেন। তাঁর বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায় হলেও ব্যবসাক্ষেত্র যাত্রীবাহী ট্রেন ও চুয়াডাঙ্গা শহর। প্রথম থেকেই প্রতিদিন সকালে পোড়াদহ থেকে ট্রেনে উঠে শিঙাড়া বেচা শুরু করেন। এরপর চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে নেমে শহরের অলিগলিতে বিক্রি শেষে বাড়িতে ফেরেন।

চুয়াডাঙ্গা শহরের সরদার পাড়ার ষাটোর্ধ্ব জাহানারা বেগম বলেন, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছলেমানের শিঙাড়া আকারে কিছুটা ছোট হলেও স্বাদ একই আছে। এমনকি বাজারের পাঁচ টাকার শিঙাড়ার তুলনায় তাঁর এক টাকার শিঙাড়া খেতে বেশি মজা।
শুরু থেকেই স্ত্রী বুলবুলি খাতুন শিঙাড়া তৈরির কাজে ছলেমানকে সহযোগিতা করছেন। প্রথম দিকে প্রতিটি শিঙাড়ার দাম ছিল ২৫ পয়সা। পর্যায়ক্রমে ১৯৯০ সালে তা গিয়ে দাঁড়ায় এক টাকায়। সেই থেকে টানা ৩০ বছর ধরে প্রতিটি শিঙাড়া এক টাকা দরে বিক্রি করছেন ছলেমান।

এক টাকার শিঙাড়া ছয় বছর বয়সী ছেলে আহাদের ভীষণ প্রিয় বলে জানালেন শহরের মসজিদ পাড়ার গৃহবধূ সালমা খাতুন। তাঁর ভাষ্য, প্রায় দিনই ছেলেকে ১০ থেকে ১৫টা করে শিঙাড়া কিনে দিতে হয়।

এক শিশুর কাছে শিঙাড়া বিক্রি করছেন ছোলেমান। শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা শহরের সরদার পাড়ায়
প্রথম আলো

বর্তমানে প্রতিদিন ৮০০টি শিঙাড়া তৈরি করেন ছলেমান, যা দুপুরের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায়। বিক্রি শেষে যা লাভ হয়, তাতেই চলে যায় সংসার। উচ্চাভিলাষ না থাকায় সংসারে নেই তেমন টানাপোড়েন। সকাল ১০টার পর থেকে চুয়াডাঙ্গা শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার শিশু ও নারীরা ছলেমানের সুস্বাদু শিঙাড়ার অপেক্ষায় থাকেন।

নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম বাড়লেও তাঁর শিঙাড়ার কেন দাম বাড়েনি, এমন প্রশ্নের জবাবে বৃদ্ধ ছলেমান বলেন, যাঁদের পাঁচ টাকা দামের শিঙাড়া কেনার সামর্থ্য নেই, কিন্তু খেতে মন চায়, তাঁদের জন্য মূলত শিঙাড়ার দাম বাড়ানো হয়নি। শিঙাড়া বিক্রিতে দিন দিন লাভ কমে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘গরিব ছোট ছোট শিশুদের কথা ভেবে দাম এক টাকাই রাখছি। যত দিন শিঙাড়া বিক্রি করব, দাম এক টাকাই রাখব।’