২৬ মার্চ থেকে চলবে যাত্রীবাহী ট্রেন, অবারিত হলো পর্যটনের দ্বার
রেলপথে ভারত-বাংলাদেশ তথা দুই বাংলার সংযোগ স্থাপনের মাহেন্দ্রক্ষণ ঘিরে চিলাহাটি রেলস্টেশনে এখন সাজ সাজ রব। আজ বৃহস্পতিবার সেই ঐতিহাসিক দিন। দীর্ঘ ৫৫ বছর পর আবার চালু হলো নীলফামারীর চিলাহাটির সঙ্গে ভারতের হলদিবাড়ীর রেল যোগাযোগ। আজ বৃহস্পতিবার থেকে এই পথে আপাতত পণ্যবাহী রেল চলাচল শুরু হলেও আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর (৫০ বছর পূর্তি) দিনে যাত্রীবাহী রেল চলাচল শুরু হবে। আর তার মাধ্যমে অবারিত হচ্ছে সীমান্তের দুই পাড়ের মানুষের পর্যটন বিনোদনের এক বিশাল দ্বার।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ বেলা সাড়ে ১১টায় এক ভার্চ্যুয়াল দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিয়ে দুপুর ১২টার দিকে দুই দেশের মধ্যে এই রেলপথের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেছেন। এই ঘোষণার সময় মানুষের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। চিলাহাটি রেলস্টেশনে উপস্থিত লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাড়ির পাশেই প্রতিবেশী দেশে চলাচলের রেলরুট চালু হওয়ায় তাঁরা এখন ইচ্ছে হলেই পরিবার নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারবেন ভারত, নেপাল, ভুটানের পাহাড়ঘেরা পর্যটনকেন্দ্রগুলোর উদ্দেশে। আর এতে খরচ হাতের নাগালে থাকবে বলেই তাঁদের যত উচ্ছ্বাস।
রেলওয়ে সূত্রমতে, চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রুট চালুর মধ্য দিয়ে ঢাকা থেকে সরাসরি ভারতের শিলিগুড়ি পর্যন্ত যাবে যাত্রীবাহী ট্রেন। এতে করে দার্জিলিং, মিরিক, গ্যাংটক, কার্শিয়াং, কালিম্পং, গরুবাথান, নেপাল, ভুটানসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন পর্যটকেরা। শিলিগুড়িতে রয়েছে বাগডোগরা বিমানবন্দর। এতে করে সড়ক-রেলপথে তো বটেই, আকাশপথেও সহজেই দূরের গন্তব্যগুলোতে যাওয়া যাবে সহজেই।
একইভাবে ভারতীয় পর্যটকেরা এই পথে সহজে আসতে পারবেন নীলফামারীর নীলসাগর, নীলকরদের নীলকুঠি, তিস্তা ব্যারাজ, ধর্মপালের গড়সহ নানা পুরাকীর্তি, রংপুরের তাজহাট জমিদার বাড়ি, বগুড়ার মহাস্থানগড়, সুন্দরবন, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন পর্যটন এলাকায়। ট্রেনে এসে নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহার করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, টেকনাফসহ বিভিন্ন স্থানে যেতে পারবেন সহজে।
চিলাহাটি রেলস্টেশন থেকে হলদিবাড়ী রেলস্টেশনের দূরত্ব মাত্র ১০ কিলোমিটার। হলদিবাড়ী থেকে জলপাইগুড়ি হয়ে শিলিগুড়ির দূরত্ব রেলপথে ৬৫ কিলোমিটার। শিলিগুড়ির একজন আমদানি-রপ্তানিকারক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ ভৌমিক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, শিলিগুড়ি দার্জিলিং জেলার একটি মহকুমা শহর। শিলিগুড়িতে পাঁচতারকা হোটেল সুবিধার পাশাপাশি সর্বনিম্ন ৭০০ টাকায় ডাবল বেডের হোটেল সুবিধা রয়েছে। এখান থেকে দার্জিলিং, গ্যাংটক, মিরিক, কালিম্পং, কার্শিয়াং, গজলডোবা, ডুয়ার্স, নেপাল, ভুটানসহ দর্শনীয় নানা পর্যটনকেন্দ্রে স্বল্প সময়ে স্বল্প খরচে যাতায়াত করা যায়। শিলিগুড়ি থেকেই ওই সব পর্যটনকেন্দ্রের হোটেল বুকিং করা যায় এবং প্রয়োজনে গাইডও পাওয়া যায়। এখান থেকে দার্জিলিং, গ্যাংটক সুমো নামের (মাইক্রোবাসের মতো) বাহনে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায় একসঙ্গে ৯ জন যাওয়া যায়। এখান থেকে নেপালের দূরত্ব মাত্র ৩৫ কিলোমিটার, আর ভুটানের দূরত্বও মাত্র ১৫০ কিলোমিটার। ৯ জনের একটি গ্রুপে সুমো ভাড়া পড়বে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।
বিশ্বজিৎ ভৌমিক বলেন, শিলিগুড়ি থেকে এ অঞ্চলের সব পর্যটনকেন্দ্রের দূরত্ব কম। এ কারণে এ পথে স্বল্প সময়ে স্বল্প খরচে বাংলাদেশের পর্যটকেরা ঘুরে যেতে পারবেন। এখানে পাঁচতারকা হোটেল তো রয়েছেই, রয়েছে স্বল্প খরচে থাকার হোটেলও। এলাকাটি বাঙালি-অধ্যুষিত হওয়ায় পর্যটকেরা এখানে অনেক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।
রেলওয়ে সূত্রমতে, ব্রিটিশ আমল থেকে অবিভক্ত ভারতের যোগাযোগের অন্যতম প্রধান রেলপথ ছিল চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রুট। এই পথ দিয়ে দার্জিলিং থেকে খুলনা হয়ে কলকাতা পর্যন্ত একাধিক যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী ট্রেন নিয়মিত চলাচল করত।
১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পর পথটি বন্ধ করে দেওয়া হলে নীলফামারীসহ আশপাশের জেলার ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে। সেই থেকে ব্যবসায়ী-পর্যটকসহ এলাকার মানুষেরা পুনরায় রেলপথ চালুর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। ক্রমে এই দাবিতে জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হতে থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ ৫৫ বছর পর রেলপথটি পুনরায় চালু করল দুই দেশের সরকার।
চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রুট উদ্বোধনের আরও কিছু ছবি