২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা, পুলিশের গাফিলতি তদন্তে কমিটি

ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল উদ্দিন
ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলে ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল উদ্দিন (২৫) খুনের ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার রাত সেয়া ১১টার দিকে ২৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। আজিজুল হক সিকদারকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনকে এজাহারনামীয় এবং আরও ৭ থেকে ৮ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে নিহত ফয়সালের বড় ভাই নাছির উদ্দিন বাদী হয়ে ওই মামলা করেছেন।

ফয়সাল উদ্দিন সদর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি খুরুশকুল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউয়ারপাড়ার মৃত লাল মোহাম্মদের ছেলে। আর আজিজ সিকদারের বাড়ি সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম ডেইলপাড়ায়। তাঁর বাবার নাম মৃত বাঁচা মিয়া সিকদার।

পুলিশ ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার সন্ধ্যা সাতটার দিকে ডেইলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে ফয়সালকে।

দলের নেতা–কর্মী ও পরিবারের দাবি ছিল, পুলিশের উপস্থিতিতেই আজিজ সিকদারের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের এই নেতাকে।

মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, ঘটনার দিন রাতে এবং পরের দিন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফয়সাল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দুই নারীসহ ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। পরের দিন তাঁদের ছয়জনকে ৫৪ ধারায় কক্সবাজার আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। যদিও মামলার এজাহারে আটক ছয়জনের নাম নেই। বাদীপক্ষের সঙ্গে আলোচনা এবং ঘটনার পর্যালোচনা করে আটক ছয়জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আটক ছয়জন জেলা কারাগারে আছেন।

পুলিশ পরিদর্শক সেলিম উদ্দিন বলেন, মামলার প্রধান আসামি আজিজকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করেছে বলে শোনা গেলেও আজ বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত থানা–পুলিশে হস্তান্তর করেনি। মামলার অন্য আসামিদের ধরতে মাঠে আছে পুলিশ।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আজিজের নেতৃত্বে আসামিরা ফয়সালকে হত্যার উদ্দেশ্যে হাতুড়ি, লাঠি ও রড দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত ও ধারালো অস্ত্র কিরিচ দিয়ে মাথায় কোপ মারেন। এরপর গুরুতর আহত ফয়সাল মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলে লোকজন উপস্থিত থাকলেও সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ ফয়সালকে রক্ষায় এগিয়ে আসেননি।

মামলার বাদী নাছির উদ্দিন বলেন, আজিজের নেতৃত্বেই পরিকল্পিতভাবে তাঁর ছোট ভাই ফয়সালকে হত্যা করা হয়েছে। অভিযুক্ত আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চান তিনি, যেন এভাবে অন্য কাউকে জীবন দিতে না হয়।

পুলিশের উপস্থিতিতে ফয়সালকে হত্যার ঘটনা এজাহারে উল্লেখ না করা প্রসঙ্গে নাছির উদ্দিন বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁকে আশ্বস্ত করা হয়েছে এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত এসআই আবু রায়হানের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে পুলিশ। দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেলে তাঁর (এসআই) বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।

আসামি ধরিয়ে দিলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার

ছাত্রলীগ নেতা ফয়সার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আশ্রয় না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, নিহত ফয়সাল ভদ্র স্বভাবের ছেলে ছিলেন। তিনি বিবাহিত। তাঁর স্ত্রী আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল ফয়সালকে একটি হত্যা মামলায় ফাঁসাতে না পেরে কুপিয়ে হত্যা করেছে। ফয়সালের অটোরিকশার পাঁচ গজ দূরত্বে পুলিশের গাড়ি ছিল। পুলিশ কেন নিরাপত্তা দিতে পারল না, তাতে পুলিশের কোনো গাফলতি আছে কি না, খুঁজে দেখার অনুরোধ জানিয়ে সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে জড়িত একজন আসামি ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ হাজার টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হবে। ফয়সালের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই আমরা।’

গত সোমবার বিকালে খুরুশকুল ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে নিহত ফয়সালের জানাজায় সংসদ সদস্য পুরস্কারের এ ঘোষণা সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, পূর্বপরিকল্পিতভাবেই ফয়সালকে হত্যা করেছে বিএনপি নেতা আজিজ সিকদারের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী। আজিজকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মাহমুদুল হক, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনানসহ দলের নেতারা পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা তদন্তের দাবি জানান।

গাফলতি তদন্তে পুলিশের ৩ সদস্যের কমিটি

ছাত্রলীগ নেতা ফয়সালকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশের দায়িত্ব পালনে অবহেলা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে জেলা পুলিশ।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান।

পুলিশ সুপার বলেন, তদন্তে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মো. হাসানুজ্জামান আরও বলেন, ঘটনাস্থলে এসআই আবু রায়হানসহ পুলিশের তিন সদস্য নিহত ফয়সালকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল। পুলিশ ১৬টি গুলি ছুড়েছিল। পুলিশের ওপরও হামলা হয়েছিল।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, তদন্ত দল গতকাল ঘটনাস্থল পৌঁছে নানা শ্রেণি–পেশার লোকজনের বক্তব্য, ঘটনার অনুসন্ধানকাজ সম্পন্ন করেছেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যের বক্তব্যও নিয়েছেন। বাকিটা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর জানা যাবে।