১৪৪ ধারা ভেঙে সংবাদ সম্মেলন করার চেষ্টা কাদের মির্জার, প্রশাসনের বাধা
প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট রূপালী চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করার চেষ্টা করেছেন সেতুমন্ত্রীর ছোট ভাই পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। তবে প্রশাসনের বাধায় শেষ পর্যন্ত সংবাদ সম্মেলন করতে পারেননি তিনি। এরপর কাদের মির্জা কয়েক মিনিট রূপালী চত্বরে শোকসভার জন্য তৈরি করা মঞ্চে বসে থাকেন।
আজ সোমবার বেলা তিনটার দিকে ওই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাদের মির্জা সেখানে হাজির হন। একই সময় সাংবাদিকদের মধ্যেও অনেকে সেখানে উপস্থিত হন। খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুপ্রভাত চাকমা ও জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক জ্যোতি খীসা। তাঁরা ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকায় রূপালী চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করা যাবে না বলে কাদের মির্জাকে জানিয়ে দেন। এ সময় কাদের মির্জা উচ্চ স্বরে তাঁদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে উপস্থিত পুলিশ সাংবাদিকদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর কাদের মির্জা কয়েক মিনিট রূপালী চত্বরে শোকসভার জন্য তৈরি করা মঞ্চে বসে থাকেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুপ্রভাত চাকমাকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে একই বিষয়ে জানতে চাইলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, কাদের মির্জা প্রশাসনের জারি করার ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বসুরহাট রূপালী চত্বরের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আইনত তিনি ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকাকালে সেখানে এটি করতে পারেন না। তাই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে (কাদের মির্জা) সেখানে সংবাদ সম্মেলন করতে নিষেধ করেছেন।
আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের একই স্থানে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। ১৪৪ ধারার কারণে বসুরহাট পৌর শহরে কার্যত অঘোষিত হরতালে রূপ নেয়। শহরে সারা দিন সাধারণ লোকজনের উপস্থিতি ছিল অনেক কম। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সকাল থেকে জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক জ্যোতি খীসার নেতৃত্বে এবং একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ শহরে টহল দিচ্ছে।
আরেক সাংবাদিকের ওপর হামলা
এদিকে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বার্তা২৪ ও ‘স্বদেশ প্রতিদিন’ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি গিয়াস উদ্দিনকে বসুরহাট রূপালী চত্বর-সংলগ্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে মারধর করেছে কাদের মির্জার সমর্থকেরা। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় কাদের মির্জা নিজেই গালমন্দ করতে করতে সাংবাদিকের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের দিকে এগিয়ে যান বলে অভিযোগ করেছেন গিয়াস উদ্দিন।
সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিন বলেন, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তিনি তাঁর ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পাশে দাঁড়ানো ছিলেন। এমন সময় দোকানের সামনের সড়ক দিয়ে কাদের মির্জা যাওয়ার সময় তিনি তাঁর উদ্দেশে সালাম দেন। এ সময় কাদের মির্জা তাঁকে গালমন্দ করে দোকানের দিকে এগিয়ে আসেন। একপর্যায়ে কাদের মির্জার সঙ্গে থাকা তাঁর কয়েকজন অনুসারী দোকানের ভেতর ঢুকে তাঁকে (গিয়াস উদ্দিন) কয়েকটি কিল-ঘুষি দেন। এ সময় তাঁর হাতে থাকা দুটি মুঠোফোন সেটও নিয়ে গেছেন কাদের মির্জার অনুসারীরা।
গিয়াস উদ্দিন অভিযোগ করেন, এ ঘটনার পর তিনি দোকান থেকে চলে যেতে বাধ্য হন এবং আতঙ্কের কারণে আজ সোমবার দিনভর বাড়ি থেকে বের হননি। এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেবেন কি না তা–ও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না বলে উল্লেখ করেন সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিন।
এ বিষয়ে কথা বলতে সোমবার বিকেলে কাদের মির্জার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে এক ব্যক্তি ফোন ধরে বলেন, কাদের মির্জা সেমিনারে ব্যস্ত আছেন। পরে কথা বলবেন।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহেদুল হক বলেন, ঘটনার পর ওই সাংবাদিক মুঠোফোনে তাকে এ বিষয়ে জানিয়েছেন। ওই সাংবাদিক চাইলে আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারেন। তবে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি।