হালদায় পঞ্চম দফায় ডিম ছেড়েছে মা মাছ
দেশের কার্পজাতীয় মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজননকেন্দ্র বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ চট্টগ্রামের হালদা নদীতে গতকাল শনিবার রাত থেকে আজ রোববার ভোররাত পর্যন্ত ফের ‘নমুনা ডিম’ ছেড়েছে মা মাছ। এ নিয়ে হালদা নদীতে পঞ্চম দফায় ডিম ছাড়ল মা মাছ। আগে এই নদীতে কয়েক দফায় ডিম ছাড়ার রেকর্ড থাকলেও এতবার ডিম ছাড়ার ঘটনা ছিল না।
গতকাল রাত থেকে আজ ভোর পর্যন্ত নদীর রাউজানের আজিমেরঘাট, কাগতিয়ার, হাটহাজারীর মাছুয়াঘোনা ও নাপিতেরঘাট এলাকা থেকে ১৫ থেকে ২০টি নৌকায় প্রতিটিতে ১ কেজি থেকে শুরু করে এক বালতি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক আহরণকারী।
প্রতিবছর এপ্রিল থেকে জুন—এই তিন মাসে কয়েক দফায় কার্পজাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউস) মা মাছ নদীর হাটহাজারী ও রাউজান অংশের ১০ কিলোমিটার এলাকায় দেশের বিভিন্ন নদী থেকে এসে ডিম ছাড়ে।
এ নিয়ে নদী তীরের দুই উপজেলা হাটহাজারী ও রাউজানের প্রশাসন, নদী গবেষক এবং মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা পুরো বছর নদীতে থেকে কাজ করেন। কার্পজাতীয় মাছের চাহিদা মেটাতে হালদায় নিষিক্ত ডিম থেকে ফুটানো রেণু সারা দেশে বিক্রি করা হয়।
এর আগে গত ২৯ এপ্রিল রাতে মা মাছ নদীতে খুব সামান্য পরিমাণ নমুনা ডিম দিয়েছিল। এরপর গত ২৪ মে আবারও নমুনা ডিম ছাড়ে মা মাছ। পরে ২৫ ও ২৬ মে পুরোদমে মা মাছ ডিম ছাড়ে। তবে তখন ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবের কারণে নদীতে তীব্র মাত্রায় লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ায় মা মাছ আশানুরূপ ডিম ছাড়তে পারেনি। তখন লবণাক্ততার পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৭২ গুণ বেশি। গবেষকেরা জানিয়েছিলেন, এত লোনাপানি মা মাছদের সহ্য হয়নি, তাই ডিম ছাড়ার পরিমাণ কম ছিল।
তখন ৩৫০টি নৌকায় করে ৬০০ থেকে ৭০০ জন ডিম আহরণকারী ছয় হাজার কেজির বেশি ডিম আহরণ করেছিলেন বলে জানায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা গবেষণা কেন্দ্র। পরে ২ জুন চতুর্থ দফায় ডিম ছাড়ে মা মাছ। তখন দুই হাজার কেজি ডিম আহরণ করা হয় বলে জানানো হয়। তবে গত বছরের ২২ মে ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রায় ২৫ হাজার ৩৩৬ কেজি ডিম আহরণ করেন আহরণকারীরা।
নদী গবেষকেরা জানিয়েছেন, এবার নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক নিয়মকানুনের ব্যতিক্রম ঘটিয়েছে। নিয়ম হচ্ছে প্রচুর বজ্রসহ ভারী বৃষ্টির সময়, পাহাড়ি ঢল নামলে মা মাছ বেশি ডিম ছাড়ে। কিন্তু এবার তার ঠিক উল্টো সময়েই গত চার দফায় ডিম ছেড়েছিল মা মাছ।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে চট্টগ্রামে বৃষ্টি হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে এই নদীতে এপ্রিল থেকে জুন মাসের শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি, বজ্রপাত আর পাহাড়ি ঢল হলে ডিম ছাড়ে কার্পজাতীয় মা মাছেরা।
হাটহাজারীর আমতুয়া এলাকার ডিম সংগ্রহকারী মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, তিনি আধা কেজি ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন। তবে অন্যান্য এলাকার সংগ্রহকারীরা এক কেজি থেকে এক বালতি পর্যন্ত ডিম পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মাদ রুহুল আমিন বলেন, গতকাল রাত থেকে আজ ভোর পর্যন্ত নদীতে আবার ডিম ছাড়ে মা মাছ। ১৫ থেকে ২০টি নৌকায় শ খানেক সংগ্রহকারী এক কেজি থেকে এক বালতি করে ডিম পেয়েছেন বলে তিনি জেনেছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদাবিষয়ক গবেষক অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, এবার নদীটিতে বেশ কয়েক দফায় ডিম ছাড়ে মা মাছ। তবে গতকাল রাতে যে ডিম ছেড়েছে, সেগুলো খুব সামান্য। তিনি বলেন, সামনে জোয়ার আছে, তখন আবার ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা আছে।