হাত বিচ্ছিন্ন করার পর কলেজশিক্ষকের পিঠে কোপাতে থাকে সন্ত্রাসীরা
সন্ত্রাসীরা আঘাত করার পর বাঁচার জন্য দৌড় দেন কলেজশিক্ষক তোফাজ্জেল হোসেন (৫২)। এভাবে দৌড়ে একটি সেতুর ওপরে চলে যান তিনি। সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া একদল সন্ত্রাসী আবারও হামলা চালায় তাঁর ওপর। একপর্যায়ে কুপিয়ে তোফাজ্জেল হোসেনের ডান হাতের কনুইয়ের নিচ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। এ সময় তিনি পড়ে গেলে তাঁর পিঠে এলোপাতাড়িভাবে কোপাতে থাকে সন্ত্রাসীরা।
মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বংশীতলা এলাকায় একটি সেতুর ওপর এ ঘটনা ঘটে।
গুরুতর আহত তোফাজ্জেল হোসেন কুমারখালীর বাঁশগ্রাম আলাউদ্দিন আহম্মেদ কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি একই উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের শালঘর মধুয়া এলাকার জালাল উদ্দীনের ছেলে। বিকেল পাঁচটায় এ রিপোর্ট লেখার সময় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষে তাঁর অস্ত্রোপচার চলছিল।
অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে বের হওয়া ইন্টার্ন চিকিৎসক স্বর্ণালী ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ডান হাতের কনুইয়ের নিচের অংশ ছাড়াই তোফাজ্জেল হোসেনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। পিঠে অসংখ্য জখম রয়েছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। অপারেশন চলছে।
হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তোফাজ্জেল হোসেনের ছোট ভাই মনিরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন বা কী কারণে আমার ভাইকে এভাবে কোপানো হয়েছে, তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে এর পেছনে বড় কোনো পক্ষের হাত থেকে থাকতে পারে। পরে বিস্তারিত বলতে পারব।’
পাশেই দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে হাসিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘কুপিয়ে আমার বাবার হাত কেটে ফেলেছেন সন্ত্রাসীরা। ভাবতেই পারছি না, বাবা আর হাত দিয়ে কিছু করতে পারবেন না।’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুরে কলেজ থেকে বের হয়ে বংশীতলা এলাকা দিয়ে শহরে আসছিলেন তোফাজ্জেল হোসেন। এ সময় তাঁকে কয়েকজন সন্ত্রাসী ঘিরে ধরে পেটাতে থাকে। তিনি সেখান থেকে দৌড়ে কয়েক শ গজ দূরে নির্মাণাধীন একটি সেতুর ওপর যান। সেখানে অবস্থান নেওয়া আরও ১০-১২ জন সন্ত্রাসী রামদা দিয়ে তাঁকে কোপাতে থাকে। এ সময় তাঁর ডান হাতের কনুইয়ের নিচ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তিনি পড়ে গেলে তাঁর পিঠেও এলোপাতাড়িভাবে কোপাতে থাকে তারা। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা চলে গেলে স্থানীয় লোকজন তাঁকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।
জানতে চাইলে বাঁশগ্রাম আলাউদ্দিন আহম্মেদ কলেজের অধ্যক্ষ হামিদুল ইসলাম বলেন, কী কারণে এবং কে বা কারা তোফাজ্জেল হোসেনের ওপরে হামলা করেছেন, তা এখন পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি।
এটা পূর্বপরিকল্পিত হামলা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে জানিয়ে ঘটনাস্থল থেকে কুষ্টিয়া গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে অভিযান চলছে। পারিবারিক কোনো জমিজমা নিয়ে বিরোধে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ ঘটনায় থানায় মামলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি সাব্বিরুল আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কে বা কারা হামলা করেছে, এ রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ করছে পুলিশ।