ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ভবন হস্তান্তরের আগেই দেয়ালে ফাটল ধরেছে। গত সপ্তাহে মসজিদের বিভিন্ন অংশের ভেতর ও বাইরের দেয়ালে ফাটল স্থানীয় ব্যক্তিদের নজরে আসে। এ ঘটনায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় এ ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ তাঁদের।
গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২০১৮ সালের শেষের দিকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অধীনে উপজেলা সদরের নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের পাশে মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ শুরু হয়। বাস্তবায়নে রয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ১২ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণকাজের দায়িত্ব পায় রংপুরের খায়রুল কবীর নামের এক ঠিকাদার। গত বছরের ২১ জুন এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে মসজিদটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কাছে হস্তান্তর না করায় মসজিদটি এখনো ব্যবহার শুরু হয়নি।
আজ শুক্রবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, হরিপুর উপজেলা পরিষদের পশ্চিম পাশের পশু সম্পদ দপ্তরের দক্ষিণ পাশে নির্মাণ করা হয়েছে মডেল মসজিদটি। মসজিদের সিঁড়ি ধরে এগোলেই নজরে দেয়ালের অনেক জায়গায় ফেটে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, মসজিদের জায়গায় ঠিকভাবে পাইলিং না করার কারণে তা দেবে গিয়ে দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। নির্মাণকাজে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে, না হলে এভাবে ফাটবে কেন?
জামুন গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হাকিম বলেন, ‘আমরা দেখছি, মসজিদে ফাটল ধরেছে। কী কারণে মসজিদের ভবনে ফাটল দেখা দিল, আমরা এর ব্যাখ্যা বুঝতে চাই না। ফাটলের কারণে আমরা আতঙ্কিত।’
হরিপুরের মিনাপুর এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো মসজিদটি হস্তান্তর করা হয়নি। এরই মধ্যে মসজিদে ফাটল দেখা দিয়েছে। দিন যতই যাচ্ছে, ফাটলের আকার বাড়ছে।
এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ঠিকাদার খায়রুল কবীর ফোন ধরেননি।
মসজিদে ফাটলের খবর পেয়ে গত বুধবার পরিদর্শনে যান নির্মাণকাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল) এম কে এম নুরুল হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, লিনটেন ও বিমের সঙ্গে ইটের গাঁথুনির সংযোগস্থলের পাঁচ থেকে ছয়টি জায়গাসহ দেয়ালের কয়েকটি জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। এটা ঠিকমতো কিউরিং (পানি দেওয়া) না করার কারণেও হতে পারে।
নুরুল হাসান আরও বলেন, আসলে ভবনের লোড নেবে বিম আর বিমের লোড নেবে কলাম। কলামের লোড নেবে ভিত্তিটা। ইটের তৈরি দেয়াল তো কখনো লোড নেবে না। দেয়ালে ফাটল ধরলেও সেখানে ভয়ের কিছু নেই। তবে দেয়ালে ফাটলের বিষয়টি আশঙ্কার না হলেও দৃষ্টিকটু। ফাটলগুলো সংস্কার করে দিলেই সেটা আর বোঝার উপায় থাকবে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান সরকার বলেন, হরিপুর মডেল মসজিদের দেয়ালে ফাটলের বিষয়টি নজরে এসেছে। দু-এক দিনের মধ্যে মসজিদটি পরিদর্শন করে ফাটলের কারণ যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।