কুড়িগ্রামের রৌমারী
‘হঠাৎ পাহাড়ি ঢল আইসা সব ডুবাই দিল’
রৌমারী ও চর রাজীবপুর উপজেলার ৫ ইউনিয়নের ৪৫টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যাদুর চর ইউনিয়নের বকবান্দা ব্যাপারীপাড়ার বাসিন্দা কৃষক আবদুস ছালাম। কয়েক দিন ধরে তিনি পানিবন্দী। কোমরপানি মাড়িয়ে মিস্ত্রির কাছে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কী কমুগো, হঠাৎ পাহাড়ি ঢল আইসা সব ডুবাই দিল। রাস্তাঘাট তলায় গেছে। নৌকা ছাড়া চলার উপায় নাই। বাড়িতে ভাঙা একটা নৌকা আছিল, হেইডা ঠিক করবার দিছি।’
গতকাল মঙ্গলবার সকালে যাদুর চর বাজারের কাছে কাশিয়াবাড়ী পাকা সড়কের পাশ থেকে নৌকা নিয়ে কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে পানি আর পানি। লোকজন কলার ভেলা ও ডিঙিনৌকায় পারাপার হচ্ছে। নৌকার মাঝি আবু ইছাহাক বলেন, ‘যেইখানে নৌকায় উঠলেন, সেখানে ঘাট আছিল না। শুকনা আছিল। এক সপ্তাহ আগে পাহাড়ি ঢল কালো নদী দিয়ে আইসা সব ডুবায় দিল। সেই জন্য বিভিন্ন গ্রামের মানুষ এইখানে নৌকায় উইঠা বাড়ি যায়।’
কর্ত্তিমারী ধুলাবাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দুই গ্রামের যোগাযোগের একমাত্র সড়ক পানিতে ডুবে আছে। সড়কের মাঝখানে শুধু সেতুটি দেখা যাচ্ছে। সেখান থেকে কিছুটা দূরে পুরোনো যাদুর চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পানি ওঠায় বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ এখন।
খেয়ার চর যাওয়ার পথে দেখা যায়, রাবার ড্যাম সেতু। সেতুর নিচ দিয়ে প্রচণ্ড বেগে পানি উত্তর থেকে দক্ষিণে যাচ্ছে। কৃষক সাহাদৎ মিয়া বলেন, দুই মাস ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। ঠিকমতো খড় শুকাতে পারেননি। সাত দিন আগে হঠাৎ পানি বাড়ায় সব ডুবে গেছে। অনেক কৃষকের পোয়াল জমিতেই ছিল। সব ডুবে গেছে। গরুকে কী খাওয়াবেন ভেবে চিন্তায় পড়েছেন।
খেয়ার চর বাজারের পাশে কোমরপানি ভেঙে ডিম ও লবণ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন বৃদ্ধ মো. আজাদ। তিনি বলেন, ‘কামকাজ নাই। খুব সমস্যা। এক হালি ডিম বেচতে গিয়েছিলাম। বাজারে মানুষ নাই। কিনবো কেডা। ঘুইরা আইলাম।’
খেয়ার চর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নজরুল ইসলাম জানান, তাঁর ওয়ার্ডের ছয় শতাধিক পরিবার এখন পানিবন্দী। এখন পর্যন্ত পানিবন্দী লোকজন কোনো সরকারি সহযোগিতা পাননি। এলাকার অধিকাংশ মানুষ দিনমজুর। তাঁরা কাজ না থাকায় সমস্যায় পড়েছেন।
রৌমারী স্থলবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, কাজ বন্ধ। শ্রমিক অখিল উদ্দিন ও আবুল কালাম বলেন, পাথর রাখা ডিপোয় পানি ওঠায় কাজ বন্ধ রয়েছে। তাঁরা ৩০০ টাকা হাজিরায় কাজ করেন। বন্যার কারণে এক সপ্তাহ থেকে কাজ বন্ধ। এ অবস্থায় সমস্যায় পড়ে গেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মো. আশরাফুল আলম বলেন, ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে জিঞ্জিরাম, কালো ও ধরণী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে রৌমারী ও চর রাজীবপুর উপজেলার ৫ ইউনিয়নের ৪৫টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তলিয়ে গেছে ৩০ কিলোমিটার সড়ক। ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে ৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এ ছাড়া ২৮৩ হেক্টর ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শেখ আবদুল্যাহ্ জানান, জনপ্রতিনিধিদের পানিবন্দী এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে দুর্গত ব্যক্তিদের তালিকা করতে বলা হয়েছে। রৌমারী স্থলবন্দরে পাঁচ-ছয় হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।