খুলনায় নিত্যপণ্যের পাইকারি বাজারের অন্যতম হলো নগরের ‘বড় বাজার’। রোববার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ওই বাজারের একটি দোকান থেকে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য কিনে রিকশার খোঁজ করছিলেন নগরের বয়রা এলাকার মোসলেম উদ্দিন। মালামাল বড় আকারের দুটি বস্তায় ভরা হয়েছে।
রিকশার খোঁজ করার সময় কথা হয় মোসলেম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রথমত, মাসিক বাজার। দ্বিতীয়ত, সামনে রোজা আর তৃতীয়ত, এক সপ্তাহের লকডাউন—সব মিলিয়ে মাসের অতিরিক্ত কিছু বাজার করে রাখলাম। এখন না কিনে রাখলে রোজা ও লকডাউনের কারণ দেখিয়ে দোকানিরা পণ্যের দাম আরও বাড়িয়ে দিতে পারেন।’
শুধু মোসলেম উদ্দিন নন, এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে বড় বাজারের অধিকাংশ দোকানে। মানুষ বস্তা ভরে ভরে নিত্যপণ্যে কিনছেন। ওই কাতারে রয়েছেন খুচরা বিক্রেতারাও। আর ক্রেতা সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে দোকানিদের।
কয়েকজন বিক্রেতা জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন দেওয়ার কথা শুনে মানুষ অস্বাভাবিকভাবে কেনাকাটা করছেন। গত বছরও লকডাউনের আগে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। শনিবার দুপুরে লকডাউনের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিকেল থেকেই ক্রেতাদের চাপ বাড়তে থাকে। সকাল থেকে চাপ আরও কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।
বড় বাজারের মতো এমন ভিড় দেখা গেছে গল্লামারী, নিরালা, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকার খুচরা মুদির দোকানে। নিরালার মেসার্স নয়ন স্টোরের মালিক মো. নাসির মোল্লা বলেন, অন্যান্য দিনের তুলনায় ক্রেতার চাপ অনেক বেশি। ক্রেতা সামলাতে বেগ পেয়ে হচ্ছে। লোকজন সবকিছু একটু বেশি পরিমাণে কিনছেন।
শুধু বাজার বা দোকান নয়, নগরের সড়কজুড়েই ছিল যানবাহনের মিছিল। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে মোড়ে মোড়ে সৃষ্টি হয় যানজটের। প্রচণ্ড গরম আর রোদের মধ্যে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে ট্রাফিক পুলিশদের। বিশেষ করে সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল এলাকার যানজট ছিল অসহনীয়। ওই এলাকা পার হতে আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত মানুষকে সময় ব্যয় করতে হয়েছে। সাধারণত খুলনা নগরে এমন যানজট আগে কখনো হয়নি।
কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, একদিনে এত যানবাহনের চাপ খুলনা নগরে খুব কমই দেখা যায়। এক সপ্তাহ লকডাউনের কথা শুনে লোকজন যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। মানুষের চলাচল দেখে মনেই হচ্ছে না যে দেশ বড় কোনো বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
নগরের সোনাডাঙ্গা আন্তজেলা বাস টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার ১৮টি রুটে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন রুটে যাত্রীদের ভিড়। সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। ৬০ শতাংশ ভাড়া বেশি নিলেও অনেকটা গাদাগাদি করে যাত্রী নিয়ে বাসগুলো চলাচল করছে। অধিকাংশের মুখে মাস্ক থাকলেও চলাচলের ভাব এমনই যে করোনা বলে কিছু নেই।
বিভিন্ন রুটের কাউন্টার মাস্টারের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, লকডাউনের মধ্যে সব ধরনের যানবাহনই বন্ধ থাকবে। এতে মানুষ নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছাতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। সবাই যেকোনোভাবেই হোক গন্তব্যে যেতে চান। এ কারণে এত যাত্রী সামলাতে স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারটি আর মানা হয়ে উঠছে না। যাত্রীরাও সেদিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার মো. তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, লকডাউনের কারণে অনেকে শহর ছেড়ে চলে যাবেন, আবার অনেকে শহরে ঢুকবেন, এটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া কিছু মানুষের প্রবণতা থাকে ওই সময়ের জন্য খাদ্য মজুত ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করার। এসব কারণে শহরে মানুষের পাশাপাশি যানবাহনের চাপ অনেক বেশি। প্রতিটি মোড়ে মোড়ে পর্যাপ্তসংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করেছে। যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হয়েছে।