২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

স্বশিক্ষিত কৃষিবিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদের স্বল্প জীবনকালের ধান উদ্ভাবন

নতুন উদ্ভাবিত স্বল্প জীবনকালের ধান খেতে স্বশিক্ষিত কৃষিবিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদ। গত শনিবার রাজশাহীর তানোর উপজেলার গোল্লাপাড়া মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

স্বশিক্ষিত কৃষিবিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদের এবারের উদ্ভাবন স্বল্প জীবনকালের সরু ধান। এ জন্য সেচও কম লাগে। ঝড়–বাদলের মৌসুম শুরুর আগেই কৃষক এই ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবেন।

১৩০ দিনের জীবনকাল এই ধানের গাছ খাটো। ঝড়ে ঢলে পড়ে না। বোঁটা শক্ত, বাতাসে ধান ঝরে পড়ে না। ফলন ভালো। এই ধানের ভাত ঝরঝরে। খেতে ভালো।

নূর মোহাম্মদের দাবি, বাংলাদেশে বোরো মৌসুমে এত কম জীবনকালের ধান আর নেই। এর আগে তিনিই এনএমকেপি-৫ নামের একই জীবনকালের ধান উদ্ভাবন করেছিলেন, কিন্তু সেটার চাল ছিল মোটা। তাঁর পক্ষ থেকে দেশের কৃষকদের জন্য এবারের ঈদের উপহার হচ্ছে এই নতুন ধান।

গত শনিবার সকালে রাজশাহীর তানোরের গোল্লাপাড়ায় নূর মোহাম্মদের গবেষণা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, আগের রাতের ঝোড়ো হাওয়ায় পাশের খেতের অন্যান্য জাতের ধান পড়ে গেছে। তবে নূর মোহাম্মদের নতুন জাতের এই ধানগাছ খাড়া রয়েছে। একটিও হেলে পড়েনি। নূর মোহাম্মদ বলেন, এবার বিঘায় প্রায় ২৫ মণ হারে ফলন হবে।

যদি তিনি (নূর মোহাম্মদ) এটা করে থাকেন, তাহলে কৃষকের জন্য ভালো হয়। এর সঙ্গে ফলন আরও বাড়াতে হবে। চালটা চিকন হতে হবে এবং স্বাদও ভালো হতে হবে। কারণ জীবনকাল কমিয়ে আনলে ধানের ফলন কম হয়।
ফজলুল ইসলাম, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়

এ সম্পর্কে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফজলুল ইসলাম বলেন, ‘নূর মোহাম্মদের গবেষণা মাঠে আমি বেশ কয়েকবার গিয়েছি। গবেষণা পর্যায়ের তিনি একজন ভালো কর্মী। তাঁর এবারের ধান সম্পর্কে আমি এখনো অবহিত নই। তবে ১৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশে সাধারণত বোরো মৌসুমে ধান হয় না। জীবনকাল কমিয়ে আনলে ধানের ফলন কম হয়। যদি তিনি এটা করে থাকেন, তাহলে কৃষকের জন্য ভালো হয়। এর সঙ্গে ফলন আরও বাড়াতে হবে। চালটা চিকন হতে হবে এবং স্বাদও ভালো হতে হবে।’

নূর মোহাম্মদের বাড়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলার গোল্লাপাড়া গ্রামে। দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। বরেন্দ্রভূমিতে প্রতিবছরই খরায় নষ্ট হয়ে যায় ধান। সেই ধান রক্ষা করতেই গবেষণার কাজে লেগে যান তিনি। নিজের মাটির ঘরটা হয়ে উঠেছে রীতিমতো গবেষণাগার। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান হেলাল উদ্দিনের সাহচর্য পান নূর মোহাম্মদ। সেখানে হাতে-কলমে শেখেন অনেক কিছু।

শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ না থাকলেও সংকরায়ণ করে একের পর এক নতুন ধান উদ্ভাবন করছেন নূর মোহাম্মদ। এ পর্যন্ত সংকরায়ণের পর নূর মোহাম্মদের কৌলিক সারির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই শ–এর বেশি। এর মধ্যে পাঁচটি সারি জাত হিসেবে স্বীকৃতির যোগ্য বলে তিনি মনে করেন।

সবশেষ নূর মোহাম্মদ স্বল্প জীবনকালের সরু ধানের নতুন সারি উদ্ভাবন করেছেন। এর নাম দিয়েছেন ‘নূর ধান-২’। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য, বপন থেকে কাটা পর্যন্ত ১৩০ দিন সময় লাগবে। ধান পেকে গেলেও পাতা সবুজ থাকবে। গাছ খাটো, এ জন্য ঝড়ে হেলে পড়ে না। বোঁটা শক্ত হওয়ার কারণে ঝড়ে এই ধান শিষ থেকে ঝরে পড়ে না। গাছের উচ্চতা ৮৭ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার। ধানের ছড়ার দৈর্ঘ্য ২৫ থেকে ২৬ সেন্টিমিটার। কুশির সংখ্যা ৮ থেকে ১০টি। আগাম কাটা যাবে। এ জন্য সেচও কম লাগবে। প্রায় নয় বছরের গবেষণায় তিনি এই নতুন ধান উদ্ভাবন করলেন।

নূর মোহাম্মদের দাবি, দেশে বোরো মৌসুমে এর চেয়ে কম জীবনকালের ধান নেই। এর পরেই আছে বাংলামতি। সময় লাগে ১৩৫ দিন। এর আগে তিনি একই জীবনকালের এনএমকেপি-৫ ধান উদ্ভাবন করেছিলেন। এনএমকেপির অর্থ হচ্ছে ‘নূর মোহাম্মদ কৃষি পরিষেবা’। এবার ধানের চেয়ে এনএমকেপি-৫–এর চাল মোটা। গাছ এত খাটো ছিল না। এ ছাড়া আমন মৌসুমের জন্যও তিনি খরাসহিষ্ণু ও স্বল্প জীবনকালের আরও দুই জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন।

কৃষি উৎপাদনে সাফল্যের জন্য নূর মোহাম্মদ ২০০৫ সালে পান রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক। সেরা কৃষি উদ্ভাবন ক্যাটাগরিতে ২০১৮ সালে তীর-প্রথম আলো কৃষি পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।