তিনি জীবিত থাকতেই স্ত্রীর নামে বিধবা ভাতার কার্ড করেছেন। সুস্থ ছেলে ও শ্যালকের নামে কার্ড করিয়ে তুলছেন প্রতিবন্ধী ভাতা। এখানেই শেষ নয়, স্বামী থাকা সত্ত্বেও নিজের দুই শ্যালিকার নামেও বিধবা ভাতার কার্ড করে টাকা তুলেছেন। বাদ যায়নি শ্বশুর, শাশুড়িও। তাঁদের নামেও বয়স্ক ভাতার কার্ড করেছেন।
এভাবে সরকারি সহায়তার ভাতা তুলছেন ফেনীর ফুলগাজীর দরবারপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য কামরুজ্জামান। সরকারি ‘ভাতাপ্রেমী’ এই ইউপি সদস্য ২০১৬ সাল থেকেই নিজের পরিবারের সদস্যদের নামে সাতটি কার্ড করিয়ে ভাতা তুলেছেন। তবে পরিবারের সদস্যরা এ কথা জানতেন না বলে দাবি করেছেন। তাঁরা কোনো ভাতার জন্যও আবেদন করেননি। বিষয়টি জানার পর গত মঙ্গলবার ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌসী বেগম ওই ইউপি সদস্যকে এসব অনিয়মের বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্যও বলা হয়েছে তাঁকে।
কয়েক দিন আগে বিষয়টি স্থানীয় কয়েকজনের কাছ থেকে জানতে পারেন ফুলগাজীর ইউএনও ফেরদৌসী বেগম। পরে তিনি উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সত্যতা পান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ইউপি সদস্য কামরুজ্জামানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। তিনি বলেন, ওই ইউপি সদস্যকে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। জবাব পাওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জানা গেছে, ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান নিজের স্ত্রী সালমা তাহিনুরের নামে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতা তুলেছেন নিয়মিত। ছেলে নাভিদুল হাসানের পিতৃপরিচয় গোপন করে প্রতিবন্ধী ভাতাও তুলেছেন। দুই শ্যালিকা উম্মে সালমা ও উম্মে রুমানের নামে তুলছেন বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতা। শ্বশুর নুরেরজ্জামান ও শাশুড়ি বিবি আয়েশার নামে বয়স্ক ভাতা এবং শ্যালক আনিসুজ্জামানের নামে তুলেছেন প্রতিবন্ধী ভাতা। সব মিলিয়ে মাসে চার হাজার টাকার ভাতা তুলে নিয়েছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব ভাতার বিষয়ে পরিবারের অন্য সদস্যরা কিছুই জানতেন না। ইউপি সদস্যের দুই শ্যালিকা উম্মে সালমা ও উম্মে কুলসুম বলেন, তাঁদের স্বামী জীবিত। তাঁরা কখনো ভাতার বিষয়ে আবেদনও করেননি।
স্ত্রী ও শ্যালিকাদের নামে ভাতার কার্ড করার বিষয়ে প্রশ্ন করলে কামরুজ্জামান উত্তর দেননি। তবে ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাঁর ছেলে একবার রিকশা থেকে পড়ে হাত ভেঙে ফেলেছিল। এ কারণে তিনি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করেছেন। এ ছাড়া তিনি ভাতা নিয়ে তেমন কোনো অনিয়ম করেননি বলে দাবি করেন।
দরবারপুর ইউপির চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন মজুমদার বলেন, একজন ইউপি সদস্য হয়ে পরিবারের লোকজনের নামে অন্যায়ভাবে বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতা তুলে নেওয়া কোনোভাবেই ঠিক হয়নি।
দুই শ্যালিকা উম্মে সালমা ও উম্মে রুমানের নামে তুলছেন বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতা। শ্বশুর নুরেরজ্জামান ও শাশুড়ি বিবি আয়েশার নামে বয়স্ক ভাতা এবং শ্যালক আনিসুজ্জামানের নামে তুলেছেন প্রতিবন্ধী ভাতা। সব মিলিয়ে মাসে চার হাজার টাকার ভাতা তুলে নিয়েছেন তিনি।
দরবারপুর ইউপির সদস্য কামরুজ্জামান দরবারপুর ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করছেন। জানতে চাইলে উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি আবুল আলম আজমির বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জেনেছি, বিষয়টি সঠিক। দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।’