সোনাহাট সেতুর গাইড বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সোনাহাট সেতুর গাইড বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, দুধকুমার নদ থেকে বালু তুলে ৩১৪ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুর ডান তীর নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে বর্ষায় বড় ধরনের বন্যা হলে বালুর বাঁধটি দুধকুমার নদের গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দুধকুমার নদের ওপর ২০১৯ সালে ২৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৪৫ মিটার পিসি গার্ডার সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। অপর দিকে সোনাহাট সেতুর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় সোনাহাট সেতুর উভয় পাশে ৮১৪ মিটার সেতু রক্ষায় বাঁধ নির্মাণের কাজ করছে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সেতুর পশ্চিম দিক অর্থাৎ ডান তীরে ৩১৪ মিটার বাঁধ নির্মাণ করছে এম এ এন্টারপ্রাইজ এবং মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে বাঁধের টপ ধরা হয়েছে ৬ মিটার, স্লোপ (ঢাল) ২০ মিটার এবং লাঞ্চিং অ্যাপ্রোন (ব্লক বসানো) ২৮ মিটারের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৯ কোটি ৩৯ লাখ ৯৩ হাজার ৮৩১ টাকা। কাজ পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠান দুটি শাহজাহান আলী সোহাগ নামে একজনকে বালু উত্তোলনের জন্য সাব ঠিকাদার নিয়োগ করেছে। তিনি দুধকুমার নদে দুটি অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে বাঁধের কাজ করছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, ড্রেজার মেশিন দুটি দিয়ে নির্মাণাধীন বাঁধ থেকে ১০০ গজ এবং পুরোনো লোহার সেতুর পিলারের পাশ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ সময় ড্রেজারের মালিক গোলাপ উদ্দিন বলেন, ‘সাব ঠিকাদার শাহজাহান আলী সোহাগের নির্দেশে আমি বালু উত্তোলন করছি।’
ড্রেজার মেশিন দুটি দিয়ে নির্মাণাধীন বাঁধ থেকে ১০০ গজ এবং পুরোনো লোহার সেতুর পিলারের পাশ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ সময় ড্রেজারের মালিক গোলাপ উদ্দিন বলেন, ‘সাব ঠিকাদার শাহজাহান আলী সোহাগের নির্দেশে আমি বালু উত্তোলন করছি।’
পাইকেরছড়া ইউনিয়নের তহশিলদারের মাধ্যমে তথ্য নিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোনাহাট এলাকার বাসিন্দা আবদুল মালেক ও হাশেম আলীর ভাষ্য, সোনাহাট সেতুর গাইড বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন দেখেও না দেখার ভান করছে। যেভাবে সেতুর পাশ থেকে বালু তোলা হচ্ছে, এতে আগামী বর্ষায় নদে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেবে এবং বালুর বাঁধ ধসে যাবে। অথচ পূর্ব দিকে নদের মধ্যে বিশাল চর পড়ে আছে, সেখান থেকে বালু তোলা হলে পানির গতিপথ তৈরি হতো।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ফজলুল হক উল্টো অভিযোগ করে বলেন, তাঁর সাইট থেকে বালু উত্তোলন করছে একটি মহল। এতে বাঁধ নির্মাণে অনেক হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পাইকেরছড়া ইউনিয়নের তহশিলদারের মাধ্যমে তথ্য নিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, সবখানেই কিছু সাব ঠিকাদার থাকেন, মূলত তাঁরাই কাজ করেন। এ বিষয়ে সমন্বয় মিটিংয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিষয়গুলো দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।