সোনাগাজীতে ভোটের পরদিন কেন্দ্রে মিলল সিলযুক্ত ব্যালট

সিলমারা ব্যালট পেপার উদ্ধারের পর পরাজিত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা সড়ক অবরোধ করেন। সোমবার সন্ধ্যায় সোনাগাজী- মুহুরী প্রকল্প সড়কে ছাড়াইতকান্দি হোসাইনীয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের পরদিন একটি ভোটকেন্দ্রের ভেতরে সিলযুক্ত শতাধিক ব্যালট পেপার পাওয়া গেছে। আজ সোমবার দুপুরে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ছাড়াইতকান্দি হোসাইনীয়া মাদ্রাসার কেন্দ্রে এসব ব্যালট পেপার পাওয়া যায়। এসব ব্যালট উদ্ধার করতে গেলে দুই আনসার সদস্যকে আটকিয়ে রাখেন স্থানীয় লোকজন। পরে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করেছে।

ব্যালট উদ্ধারের পর পুনরায় ভোটের দাবিতে সোনাগাজী-মুহুরী প্রকল্প সড়ক আড়াই ঘণ্টা অবরোধ করেন স্থানীয় ব্যক্তিরা।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, পড়ে থাকা ব্যালটগুলো চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ছিল। ব্যালটগুলোতে নৌকা, ঘোড়া, লাঙ্গল ও হাতপাখা প্রতীকে সিল মারা আছে। সোমবার রাত আটটা পর্যন্ত ব্যালটগুলো ওই কেন্দ্রেই পড়ে ছিল। গত রোববার চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলার সদর ইউপি নির্বাচনে ৪ হাজার ১৯৯ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী উম্মে রুমা। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সামছুল আরেফিন পেয়েছেন ২ হাজার ৮০৪ ভোট।

সিলমারা ব্যালট পেপার। সোমবার সন্ধ্যায় সোনাগাজী- মুহুরী প্রকল্প সড়কে ছাড়াইতকান্দি হোসাইনীয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে
ছবি: প্রথম আলো

সোমবার ব্যালট উদ্ধারের পর ঘোড়া প্রতীকের পরাজিত প্রার্থী সামছুল আরেফিন বলেন, সঠিক ব্যালট পেপার সরিয়ে ভুয়া ব্যালট পেপার দিয়ে তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ কারচুপিতে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ ভোট গ্রহণের কর্মকর্তারা জড়িত থাকতে পারেন।

স্থানীয় ওয়ার্ডের পরাজিত ইউপি সদস্য প্রার্থী এনামুল হক ফল স্থগিত করে পুনরায় ভোট গণনার দাবিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
আনসার সদস্য মো. মামুন বলেন, ভোটের দিন তিনি ওই কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ওই কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন অগ্রণী ব্যাংক সোনাগাজী শাখার কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম। মামুন ওই ব্যাংকে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করেন। সোমবার বিকেলে তাজুল ইসলামের নির্দেশে তিনি ছাড়াইতকান্দি হোসাইনীয়া মাদ্রাসার কেন্দ্রে পড়ে থাকা ব্যালট পেপার নিতে যান। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাঁদের দুজনকে আটক করে রাখেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

সদর ইউপি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা তূর্য সাহা বলেন, ‘ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ফলাফলের শিট ও অবশিষ্ট ব্যালট পেপার বুঝে পেয়েছি। এখন যদি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাওয়া যায়, এর দায়ভার প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকেই নিতে হবে।’

রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, প্রার্থী ও স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে বিষয়টি শোনার পর তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছেন। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম মুঠোফোনে এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মাইনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার সদর ইউপির ছাড়াতকান্দি হোসাইনীয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোটের পরদিন ব্যালট পাওয়ার কথা তিনি স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে শুনেছেন। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা এ বিষয়ে তাঁকে কিছু জানাননি। এরপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম বলেন, দুই আনসার সদস্যকে আটক ও সড়ক অবরোধের বিষয়টি শুনে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে যান। সেখানে অবরোধকারীদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি দিয়ে দুই আনসার সদস্যকে উদ্ধার করে থানায় আনা হয়।