সেন্টমার্টিনে দৈনিক ৩ হাজার পর্যটকের ভ্রমণ সুবিধা চায় টুয়াক
প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে দৈনিক তিন হাজার পর্যটকের ভ্রমণ সুবিধা চায় ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক)। অন্যথায় পর্যটনশিল্পের সঙ্গে যুক্ত অন্তত তিন লাখ মানুষ বিপদে পড়বেন। মুখ থুবড়ে পড়বে এ শিল্পে বিনিয়োগকৃত হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ।
এমনটা দাবি করে আজ শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজার শহরের রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড অ্যাকুয়ারিয়ামের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে টুয়াক। সংগঠনের নেতারা সেন্ট মার্টিনকে রক্ষা এবং পর্যটকের ভ্রমণ সুবিধাসহ ১৫ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপও চাওয়া হয়।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর শেষ পৃষ্ঠায় ‘দিনে যেতে পারবেন ১,২৫০ জন পর্যটক’ শীর্ষক শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সেখানে পর্যটক নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আসছে মৌসুমে (আগামী ডিসেম্বর থেকে) দ্বীপটিতে দিনে ১ হাজার ২৫০ জনের বেশি পর্যটক যেতে পারবেন না। যাঁরা যাবেন তাঁদের অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক শেখ নাজমুল হুদা আজ প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং দ্বীপটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে লোকসমাগম সীমিতকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তিন বছর আগে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা কারণে এত দিন তা কার্যকর হয়নি।
আজ সংবাদ সম্মেলনে সরকারের এই সিদ্ধান্তকে কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পকে ধ্বংসের চক্রান্ত উল্লেখ করে টুয়াক সভাপতি তোফায়েল আহমদ বলেন, অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে দৈনিক ১ হাজার ২৫০ জন পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হলে বিদেশি পর্যটকেরা বাংলাদেশ ভ্রমণে না আসার পাশাপাশি দেশীয় পর্যটকেরাও কক্সবাজার ভ্রমণে নিরুৎসাহিত হবেন। এর ফলে হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে গড়ে তোলা পর্যটনশিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বেকার হয়ে পড়বেন এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত অন্তত তিন লাখ মানুষ।
করোনা মহামারির এ সময়ে যা সামাল দেওয়া অনেকের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে। তাই অন্তত আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত দৈনিক ৩ হাজার পর্যটকের সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের সুযোগ দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চাইতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন।
বর্তমানে টুয়াকের তত্ত্বাবধানে জেলায় দুই শতাধিক ট্যুর অপারেটর ও পাঁচ শতাধিক গাইড এবং লক্ষাধিক পযর্টকসেবী কর্মী মাঠে সক্রিয় রয়েছে।
টুয়াকের উপদেষ্টা মুফিজুর রহমান বলেন, কক্সবাজারে প্রতিবছর ভ্রমণে আসেন ২০ লাখের বেশি পর্যটক। তাঁদের ৮০ শতাংশের ভ্রমণ তালিকায় যুক্ত থাকে প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন। দ্বীপটিতে গত বছরও দৈনিক সর্বোচ্চ ১০ হাজার পর্যটক ভ্রমণে গেছেন। এখন হঠাৎ করে সংখ্যাটা ১ হাজার ২৫০ জনে নামিয়ে আনলে পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
বর্তমানে সেন্ট মার্টিনে ১০৬টি হোটেল, মোটেল, কটেজ ও ২০টির বেশি রেস্তোরাঁ রয়েছে। লোকসংখ্যা প্রায় ১২ হাজার।
উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হলো
আগামী পাঁচ বছর পর্যটকদের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের সুযোগ অব্যাহত রাখা; দেশীয় পর্যটকদের নিবন্ধনের প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত না করা এবং কোনো ধরনের সেবা/ভ্রমণ কর আরোপ না করা। শুধু বিদেশি পর্যটকদের নিবন্ধনের আওতায় আনা ও সেবা/ভ্রমণ কর আরোপ করা যেতে পারে; সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পরিবেশ রক্ষায় ক্ষতিকারক সব ধরনের প্লাস্টিকজাত পণ্য ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্যের ব্যবহার ও সরবরাহ নিশ্চিতকরণ; দ্বীপের ভাঙনরোধে মূল ভূখণ্ড থেকে ৫০০ মিটার দীর্ঘ আধুনিক জেটি তৈরি করা; দ্বীপে উৎপাদিত সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা এবং জেনারেটর ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ; দ্বীপের দক্ষিণাংশে পর্যটকদের যাতায়াত নিষিদ্ধ ঘোষণা করে জীববৈচিত্র্যের জন্য অভয়াশ্রম ঘোষণা; দ্বীপের ভূগর্ভস্থ পানির চাপ কমাতে সমুদ্রের পানি শোধন করে ব্যবহার উপযোগী করার প্রকল্প গ্রহণ ইত্যাদি।