লালমনিরহাটের পাটগ্রামে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার শিকার আবু ইউনুস মোহাম্মদ শহীদুন্নবীর সঙ্গে সেদিন সকাল থেকেই ছিলেন সুলতান রুবাইয়াত সুমন। সেই ঘটনায় রুবাইয়াতও আহত হয়েছিলেন। শহীদুন্নবীর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন রুবাইয়াত সুস্থ হয়ে লিখিতভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
সুলতান রুবাইয়াত জানিয়েছেন, গত ২৯ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে রংপুর শহরের মুন্সিপাড়ায় রুবাইয়াতের বাসায় মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন শহীদুন্নবী। এরপর শহীদুন্নবী পাটগ্রামে তাঁর বোনের বাসা ও পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুলের বাসায় যাবেন বলে জানান। রুবাইয়াত যাবেন কি না, জানতে চান। এরপর তাঁরা মোটরসাইকেল নিয়েই রওনা দেন। দুপুরে তাঁরা লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের কাকিনা বাজারে পৌঁছান। সেখানে জোহরের নামাজ পড়েন। পরে কাকিনায় নাশতা করে পাটগ্রামের উদ্দেশে রওনা হন। বিকেল চারটার দিকে পাটগ্রামে পৌঁছানোর পর শহীদুন্নবী তাঁকে বলেন, বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজ পড়ে তাঁর বোনের বাসা ও বন্ধু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিনের বাসায় যাবেন।
সুলতান রুবাইয়াত বলেন, এরপর তাঁরা বুড়িমারী কেন্দ্রীয় মসজিদে পৌঁছান। সেখানে রুবাইয়াত তাঁর মুঠোফোন চার্জ দিতে মসজিদের পাশের একটি হার্ডওয়্যারের দোকানে যান। ফিরে এসে অজু করে তিনি মসজিদের বারান্দায় আর শহীদুন্নবী মসজিদের ভেতরে আসরের নামাজ পড়েন।
নামাজ শেষে দোকান থেকে মুঠোফোন নিয়ে মসজিদ চত্বরে আসেন রুবাইয়াত। শহীদুন্নবী মসজিদ থেকে বের হতে দেরি করায় তিনি মসজিদে ঢুকে দেখেন, শহীদুন্নবী উত্তেজিত অবস্থায় বলছেন, ‘ইমাম–মোয়াজ্জিন কোথায়? আমি (শহীদুন্নবী) গোয়েন্দা সংস্থার লোক, এদের নামাজ–কালাম হয় না। আমি মসজিদে তল্লাশি করব ইত্যাদি।’ অসংলগ্ন কথা বলতে দেখে রুবাইয়াত তাঁকে চুপ করতে বলেন। কিন্তু তিনি কথা না শুনে গালাগালি করছিলেন। এ জন্য সুলতান রুবাইয়াত সবার কাছে ক্ষমাও চান। এ সময় ইউপি সদস্য (মেম্বার) তাঁদের দুজনকে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যান।
সুলতান রুবাইয়াত জবানবন্দিতে আরও বলেছেন, ইতিমধ্যে সেখানে পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নেতৃত্বে পুলিশ পৌঁছায়। তবে উত্তেজিত জনতা বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) জানালার গ্রিল ভেঙে সন্ধ্যা আনুমানিক সাতটার দিকে শহীদুন্নবী ও রুবাইয়াতকে মারধর করতে শুরু করেন। এ অবস্থায় ওসি রুবাইয়াতকে টানাহেঁচড়া করে সেখান থেকে উদ্ধার করেন। পরে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে তিনি জানতে পারেন, উত্তেজিত জনতার মারধরে শহীদুন্নবী মারা গেছেন।
লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তাঁকে উদ্ধার করতে গিয়ে পাটগ্রাম থানার ওসিসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। তবে পরিবেশ ও পরিস্থিতিগত কারণে শহীদুন্নবীকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করতে না পারাটা দুঃখজনক ঘটনা। যাঁরা এ জঘন্য অপরাধ করেছেন, তাঁদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। পুলিশ সুপার জানান, এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।