সুনামগঞ্জে পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ, এসআই দেবাশীষকে বদলি
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে পুলিশের নির্যাতনে উজির মিয়ার (৪০) মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পর পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) দেবাশীষ সূত্রধরকে বদলি করা হয়েছে। আজ বুধবার বিকেলে তাঁকে শান্তিগঞ্জ থানা থেকে দিরাই থানায় বদলি করা হয়। বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ। এর আগে উজির মিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর পরিবার দেবাশীষ সূত্রধরসহ শান্তিগঞ্জ থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ করে আসছিল।
শান্তিগঞ্জের শত্রুমর্দন গ্রামের বাসিন্দা উজির মিয়া গত সোমবার দুপুরে মারা যান। পুলিশের নির্যাতনে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর পরিবারের। এরপর ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের আইনের আওতায় আনার দাবিতে ওই দিন দুপুরে উপজেলার পাগলাবাজার এলাকায় লাশ নিয়ে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তেজিত লোকজনকে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, উজির মিয়া ছোটখাটো ব্যবসা করতেন। গত ৯ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে বাড়ি থেকে উজির মিয়াকে ধরে নিয়ে যায় শান্তিগঞ্জ থানার পুলিশ। থানায় নিয়ে তাঁর ওপর নির্যাতন চালানো হয়। পরদিন তাঁকে একটি চুরির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। ওই দিনই আদালত থেকে উজির মিয়া জামিনে ছাড়া পান। বাড়িতে আসার পর উজির মিয়ার সারা শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা। এরপর উজির মিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে পাঁচ দিন চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হলে তাঁকে আবার বাড়িতে আনা হয়। গত সোমবার সকালে তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে স্থানীয় কৈতক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারের অভিযোগ, শান্তিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আক্তারুজ্জামান, দেবাশীষ ও পার্ডন কুমার সিংহ উজির মিয়াকে হেফাজতে নিয়ে ব্যাপক নির্যাতন করেছেন।
এদিকে উজির মিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশের করা পৃথক দুটি কমিটি তদন্তকাজ করছে। আজ সকালে জেলা প্রশাসনের করা তদন্ত কমিটির প্রধান সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার উল হালিম কমিটির অন্য সদস্যদের নিয়ে ওই এলাকায় যান। তাঁরা এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। একইভাবে পুলিশের করা তদন্ত কমিটিও কাজ করছে।
সার্বিক বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। যেহেতু আমাদের দু–একজন সদস্যকে নিয়ে কথা উঠেছে। তাই বিষয়টি আমরা আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। আমাদের কোনো ভুলত্রুটি আছে কি না, আমরা সেটিও দেখব।’