সুনামগঞ্জে টিসিবির পণ্য পাচ্ছেনা মানুষ
পবিত্র রমজান মাসে ভোক্তাদের সুবিধার্থে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) নির্ধারিত কিছু পণ্য কম দামে বিক্রির উদ্যোগ নিলেও সুনামগঞ্জের কোথাও এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। টিসিবির পণ্য বিক্রি করা জেলার টিসিবি ডিলারদের জন্য লাভজনক না হওয়ায় তাঁরা এ পণ্য উত্তোলন ও বিক্রি করছেন না। ফলে সাধারণ মানুষ কম দামে টিসিবির পণ্য কেনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
টিসিবির সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রমজান মাসে মানুষের সুবিধার্থে পাঁচটি পণ্য তুলনামূলক কম দামে ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রি করছে টিসিবি। পণ্যগুলো হচ্ছে ভোজ্য তেল, ছোলা, চিনি, ডাল ও খেজুর। এই পণ্যগুলো নির্ধারিত ডিলারের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে বিক্রি করার কথা। গত ২৩ এপ্রিল থেকে টিসিবির সিলেট বিভাগের আওতায় সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।
কিন্তু সুনামগঞ্জের ডিলাররা এসব পণ্য উত্তোলন ও বিক্রি করছেন না। টিসিবির পক্ষ থেকে ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। এমনকি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এসব ডিলারকে অনুরোধ করা হলেও কাজ হয়নি।
তবে ডিলাররা বলছেন, টিসিবির বিভাগীয় কার্যালয় সিলেটের শেরপুরে। এসব পণ্য আনতে হয় শেরপুর থেকে। পণ্য উত্তোলন ও সুনামগঞ্জ থেকে আনায় ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই পরিবহন খরচ দিয়ে এসব পণ্য সুনামগঞ্জে এনে বিক্রি করে তেমন একটা লাভ হয় না। আবার সুনামগঞ্জ থেকে উপজেলা পর্যায়ে এসব পণ্য নিয়ে শেষ পর্যন্ত লোকসান গুনতে হয়। তাই ডিলাররা টিসিবির পণ্য বিক্রিতে আগ্রহী কম।
টিসিবি সূত্রে আরও জানা গেছে, সুনামগঞ্জ জেলায় টিসিবির ২০ জন ডিলার আছেন। এই ডিলারদের সবাই জেলার বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ী। জেলা শহরের কোনো ডিলার নেই। তাই শহরে এসব পণ্যের চাহিদা থাকলেও বিক্রি করা যাচ্ছে না।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের মধ্যবাজার এলাকার বাসিন্দা আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘একসময় রমজান মাসে টিসিবির এসব পণ্য ট্রাকে করে শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করা হতো। মানুষ কম দামে পাচ্ছে বলে লাইন নিয়ে এসব পণ্য কিনত। কিন্তু গত বছরও সুনামগঞ্জে টিসিবি পণ্য বিক্রি হতে দেখিনি। এবারও বিক্রি হচ্ছে না। অথচ তুলনামূলক কম দামে এসব পণ্য পেলে মানুষের উপকার হতো।
ষোলঘর এলাকার বাসিন্দা আবদুস সামাদ বলেন, ‘ডিলাররা পণ্য বিক্রি না করলে তাঁদের ডিলারশিপ বাতিল করা উচিত। ডিলার নিয়োগ নিয়েই তো নানা রকম কথা আছে। শহরে এসব পণ্যের চাহিদা বেশি, বিক্রি করাও সহজ। অথচ শহরের কোনো ডিলার নেই।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার দুজন ডিলার এবার রমজান শুরুর তিন দিন আগে কিছু পণ্য উত্তোলন করেছিলেন। কিন্তু প্রথম দফা তোলার পর আর তাঁরা পণ্য তুলছেনও না, বিক্রিও করছেন না। জগন্নাথপুরের দুজন ডিলারের একজন হলেন সোহেল ট্রেডার্সের মালিক সোহেল মিয়া। সোহেল মিয়া গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন,‘পণ্য উত্তোলন করতে হয় শেরপুর থেকে। আবার সেখান থেকে আনতে হয় জগন্নাথপুর উপজেলায়। শেষমেশ দরে পোষায় না। তাই একবার পণ্য তুলে আর তুলিনি।’
দোয়ারাবাজার উপজেলার ডিলার বিনয় চক্রবর্তী বলেন, ‘আমার উপজেলায় যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না। ট্রাক আসে না। মূলত এ কারণেই আমি টিসিবির পণ্য আনতে পারিনি। তা ছাড়া টিসিবির পণ্য আর সাধারণ বাজারে পণ্যের দাম প্রায় সমান। এ কারণেও আগ্রহ কম।’
টিসিবির সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক ইসমাইল মজুমদার জানান, তাঁরা শুরু থেকেই সুনামগঞ্জের ডিলারদের পণ্য উত্তোলন ও বিক্রির জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। কিন্তু বারবার বলার পরও ডিলাররা রাস্তাঘাটের অসুবিধা, অতিরিক্ত পরিবহন খরচ, পণ্যের কমিশন কমসহ নানা অজুহাতে টিসিবির পণ্য বিক্রি করছেন না। কিন্তু ডিলার নিয়োগের শর্তে উল্লেখ আছে, একজন ডিলারকে টিসিবির পণ্য বিক্রি করতেই হবে।
পরিচালক ইসমাইল আরও বলেন, ‘একেবারে লাভ হবে না এটা ঠিক না, হয়তো কম লাভ হবে। কিন্তু ডিলাররা কম লাভে মানুষের এই সেবাটি দিতে রাজি হচ্ছেন না। এখন সুনামগঞ্জ জেলা শহরে নতুন ডিলার নিয়োগ দিয়ে পণ্য বিক্রি করা যায় কি না, আমরা সেই চেষ্টা করছি।’
সুনামগঞ্জ জেলার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সফিউল আলম বলেন, ‘আমরা একবার ডিলারদের ডেকে টিসিবির পণ্য উত্তোলন ও বিক্রির জন্য অনুরোধ করেছি। প্রয়োজনে তাঁদের আবার ডেকে তাগাদা দেওয়া হবে।’