সিলেটে মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান
সিলেটে বন্যার পানি ক্রমাগত বাড়ছে। অনেকের ঘরে কোমরসমান পানি। রাস্তাঘাট তলিয়ে অধিকাংশ গ্রাম উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। চুলা ডুবে যাওয়ায় রান্নাবান্নাও অনেকের বন্ধ হয়ে পড়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকটে পড়েছে বাসিন্দারা। এ অবস্থায় মানবিক বিপর্যয় রোধে বন্যার্ত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন সিলেটের সুপরিচিত তিন বিশিষ্ট সংগঠক।
আজ শুক্রবার সকালে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে সিলেটের তিন সংগঠক জানিয়েছেন, সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, সদর, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ছয় শতাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। দোকানপাট, রাস্তাঘাট, হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থাপনা তলিয়ে যাওয়ায় সবখানে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় সাধ্য অনুযায়ী সবাইকে বন্যার্ত ব্যক্তিদের পাশে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে দাঁড়ানো উচিত।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদ বলেন, সিলেটের সব কটি নদ-নদীর পানি ক্রমাগত বাড়ছে। এত দ্রুত লোকালয় তলিয়ে যাচ্ছে, এটা অকল্পনীয়। আর এর একমাত্র কারণ হচ্ছে, নদ-নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া। ভয়াবহ বন্যা এড়াতে সিলেটের নদীগুলো খনন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এর আগে এখন ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে সাধ্যমতো একে অপরের পাশে দাঁড়ানো উচিত। দেশ ও প্রবাসের সহৃদয়বান ব্যক্তিদের বন্যাকবলিত ব্যক্তিদের পাশে এগিয়ে আসা জরুরি।
বইপড়ুয়াদের সংগঠন ‘ইনোভেটর’-এর নির্বাহী সঞ্চালক ও সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক প্রণবকান্তি দেব বলেন, প্রথম দফা বন্যার রেশ না কাটতেই দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে পড়ল সিলেট। এবার খুব দ্রুত বেগে পানি বাড়ছে। রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চোখের পলকেই পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। ফলে বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগও। বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন হচ্ছে একের পর এক এলাকা। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হচ্ছে নানা জায়গা। এ মুহূর্তে দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন, ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া সরকার ও প্রশাসনের প্রধান দায়িত্ব বলে মনে করেন এই শিক্ষক।
শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের নিরাপত্তার বিষয়টি সবাইকে খেয়াল রাখার অনুরোধ জানিয়ে প্রণবকান্তি দেব আরও বলেন, বন্যার্ত ব্যক্তিদের সহায়তায় সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে। যার যেটুকু সামার্থ্য আছে, তাই নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যক্তির পাশাপাশি রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। দুর্যোগকে হৃদয় দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে জয় করতে হবে।
সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমদ চৌধুরী বলেন, বন্যায় স্থবির হয়ে পড়েছে সিলেটের জনজীবন। নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা সবচেয়ে বেশি বিপদে আছে। বরাবরের মতো মধ্যবিত্তের অবস্থা আরও করুণ। কারণ, বিপদে পড়েও তারা মুখ ফোটে কিছু বলতে পারে না, কারও কাছে হাত পাততে পারে না। এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবার সাধ্য অনুযায়ী পাশে দাঁড়ানো উচিত।
মিশফাক আহমদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘আসুন, মানুষের পাশে দাঁড়াই। বিত্তশালী ও প্রবাসীদের কাছে আকুল আবেদন জানাই বন্যার্ত ব্যক্তিদের পাশে এগিয়ে আসার জন্য। সরকারের কাছে দাবি জানাই, সিলেটকে দুর্যোগকবলিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া। সার্বিক দিক বিবেচনা করে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষাও পেছানো উচিত।’