সিলেটে ভূকম্পন: ঝুঁকিপূর্ণ তিনটি বিপণিবতান বন্ধ ঘোষণা
ভূকম্পণের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় সিলেট নগরীর তিনটি বিপণিবিতান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার বেলা সাড়ে তিনটায় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে সিটি করপোরেশনের একটি দল বিপণিবিতানগুলো বন্ধ করে দেয়। একই দিন সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ২৪টি স্থাপনার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ দপ্তর জানায়, গতকাল শনিবার সিলেট নগরীতে পাঁচবার ভূকম্পন অনুভূত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিন বিকেলে জরুরি সভা করে মেয়রের নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়। ভূমিকম্পের আশঙ্কা থাকায় দুর্যোগ মোকাবিলায় আগাম সতর্কতা হিসেবে একজন নির্বাহী প্রকৌশলীর সমন্বয়ে একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়। এই নিয়ন্ত্রণকক্ষের সমন্বয়ে সপ্তাহব্যাপী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রোববার থেকে মাঠপর্যায়ে সরেজমিন পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছে।
রোববার দুপুরে নগর ভবনে মেয়রের সভাপতিত্বে আরেকটি জরুরি সভা করে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সরেজমিন পর্যবেক্ষণ শুরু হয়। পর্যবেক্ষণে মেয়রসহ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন। নগর ভবনে পাশে সিটি করপোরেশন পরিচালিত বিপণিবিতান পর্যবেক্ষণ করে প্রকৌশলীদের পরামর্শে ঝুঁকি এড়াতে এটি ১০ দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর নগরীর কেন্দ্রস্থলের মধুবন সুপার মার্কেট পরিদর্শন করে ১০ দিন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময় মধুবন সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এখানে প্রায় ৩৫০টি দোকান রয়েছে। নিরাপত্তার কারণে সাত দিন বন্ধ রাখার অনুরোধ করেন ব্যবসায়ীরা। ৭ দিন বন্ধ রাখলে ১০ দিনও রাখা সম্ভব বলে ১০ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশনা কার্যকর করেন মেয়র। সবশেষে তিনি মিতালী ম্যানসন নামের একটি বিপণিবিতানও বন্ধ ঘোষণা করেন।
পরিদর্শনকালে মেয়র প্রথম আলোকে বলেন, বন্ধ রাখা দুটি বিপণিবিতান এই ১০ দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। ভূমিকম্পে ঝুঁকি এড়াতে কী করা যায়, তা নির্ধারণ করে পরবর্তী সংস্কারের পরামর্শ দেওয়া হবে।
পর্যবেক্ষণে নেমে মেয়র হাতমাইক দিয়ে ভূমিকম্পে সতর্কতার বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, ‘শনিবার পাঁচ দফা ভূকম্পন হওয়ায় এবং রোববার ভোরে আরেক দফা ভূকম্পন হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলেট শহরকে আগামী এক সপ্তাহ সতর্কতার সঙ্গে বসবাস করতে। আমরা ঝুঁকি এড়াতে এই উদ্যোগ নিয়েছি। এতে সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানাই।’
পর্যবেক্ষণে নেমে সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ২৪টি স্থাপনার তালিকাও প্রকাশ করেন মেয়র। তিনি তালিকাটি উপস্থিত জনসাধারণকে পড়ে শোনান।
সিটি করপোরেশনের তালিকায় থাকা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো হচ্ছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উত্তর পাশের কালেক্টরেট ভবন-৩, জেল রোডের সমবায় ব্যাংক ভবন, একই এলাকায় মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার সাবেক কার্যালয় ভবন, সুরমা মার্কেট, বন্দরবাজারের সিটি সুপার মার্কেট, জিন্দাবাজারের মিতালী ম্যানশন, দরগা গেট এলাকার হোটেল আজমীর, বন্দরবাজারের মধুবন সুপার মার্কেট, টিলাগড় এলাকার কালাশীলের মান্নান ভিউ, শেখ ঘাটের শুভেচ্ছা-২২৬ নম্বর ভবন, যতরপুরের নবপুষ্প ২৬/এ বাসা, চৌকিদেখির ৫১/৩ সরকার ভবন, পুরান লেনের কিবরিয়া লজ, খারপাড়ার মিতালী-৭৪, মির্জা জাঙ্গাল মেঘনা এ-৩৯/২, পাঠানটুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন, উত্তর বাগবাড়ির একতা ৩৭৭/৭ ওয়ারিছ মঞ্জিল, একই এলাকার একতা ৩৭৭/৮ হোসেইন মঞ্জিল, একতা-৩৭৭/৯ শাহনাজ রিয়াজ ভিলা, বনকলাপাড়া নূরানী-১৪, ধোপাদিঘির দক্ষিণ পাড়ের পৌরবিপণি মার্কেট ও ধোপাদিঘির পাড়ের পৌর শপিং সেন্টার, জেন্টস সেন্টার ও জিন্দাবাজারের রাজা ম্যানসন।
আগামী এক সপ্তাহ নগরীতে সিটি করপোরেশনের কঠোর নজরদারি থাকবে।
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামী এক সপ্তাহ নগরীতে সিটি করপোরেশনের কঠোর নজরদারি থাকবে। যেহেতু সিলেট অঞ্চল ভূমিকম্পের জন্য একটি অ্যালার্মিং ও রেড অ্যালার্ট রয়েছে। ব্যক্তিমালিকানাধীন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ঝুঁকিমুক্ত করতে চাইলে সিটি করপোরেশন সহায়তা করবে। আর সরকারি ভবনগুলোর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সতর্কতার জন্য অবহিত করা হবে।’
সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ দপ্তর থেকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ দিয়ে বলা হয়, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল সিলেট শহর ও সিলেটের সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর উপজেলা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্পের ঝুঁকিভেদে বাংলাদেশকে তিনটি বলয়ে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ তথা প্রথম বলয়েই সিলেটের অবস্থান। সিলেটের প্রায় ৫৪ কিলোমিটার দূরে ডাউকিচ্যুতির (ডাউকি ফল্ট) অবস্থান হওয়ায় এখানে ঝুঁকির মাত্রা বেশি। এখন থেকেই যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে রাখা প্রয়োজন।