সিলেটে বন্যায় ১২ হাজার নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত

বন্যায় গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রচুর নলকূপ পানিতে ডুবেছিল। ছবিটি ১৯ মে তোলা
ছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেটে বন্যার পানিতে প্রায় ১২ হাজার নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া জেলার প্রায় ৭৮ হাজার শৌচাগার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর বাইরে জকিগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৬ হাজার ৫০০ মিটার পানি সরবরাহের পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি টাকা বলে জানিয়েছে সিলেট জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

সিলেট জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বলেন, বন্যার পানি অনেক এলাকা থেকে নেমে গেলেও বেশির ভাগ এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত নলকূপ ও শৌচাগার সংস্কার হয়নি। ফলে সুপেয় পানির পাশাপাশি মানুষজন স্যানিটেশনের সমস্যায় ভুগছেন। যেসব এলাকায় এখনো পানি রয়ে গেছে, সেখানেও একই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।

তবে সুপেয় পানির সংকট মেটাতে সিলেটের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছে। জেলার কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় এ কার্যক্রম চলছে। এ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রতি ঘণ্টায় ৬০০ লিটার পানি পরিশোধন করতে পারে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা এসব প্ল্যাট থেকে পানি বিতরণ করা হচ্ছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বলেন, কানাইঘাটে ৯ দিন ধরে এবং গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে ৬ দিন ধরে এ কার্যক্রম চলছে। এর বাইরে জেলা কার্যালয়ে সংরক্ষিত আরেকটি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে নগরেও পানি সরবরাহ করা হয়েছে।

বানভাসি মানুষ জানায়, জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী, খাজাঞ্চি, অলংকারী, রামপাশা, দৌলতপুর ও দশঘর ইউনিয়ন এবং পৌর এলাকার একাংশ এখনো পানির নিচে তলিয়ে আছে। এসব এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, পানিতে নলকূপ ডুবে থাকায় বানভাসি মানুষ বিশুদ্ধ পানির সংকটে আছেন। বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছে জেলার কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার প্লাবিত এলাকায়।

বন্যায় গবাদিপশু নিয়ে মানুষ বিপাকে পড়েছিলেন
ছবি: আনিস মাহমুদ

গবাদিপশুর খামার ক্ষতিগ্রস্ত

এদিকে বন্যায় সিলেটে প্রচুর গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব খামারের শতাধিক পশু এবং কয়েক হাজার হাঁস-মুরগি মারা গেছে। এ খাতে সব মিলিয়ে জেলায় ১ কোটি ৩৭ লাখ ৯৩ হাজার ১৭০ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে বন্যার পানি পুরোপুরি কমলে এ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশঙ্কা করছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় জানিয়েছে, জেলার ১৩টি উপজেলার ৬৬টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় রয়েছে। বন্যায় ১০৫টি গবাদিপশু এবং ২২ হাজার ৫৬৮টি হাঁস-মুরগির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৭ হাজার ২৮৪টি মুরগি, ৫ হাজার ২৮৪টি হাঁস, ৪৯টি ছাগল, ২৬টি ভেড়া, ১৮টি গরু ও ১২টি মহিষ। এতে খামারিদের ৪০ লাখ ২৫ হাজার ৬৭০ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। প্লাবিত চারণ ভূমির পরিমাণ ২ হাজার ১২৮ একর।

একই সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১ হাজার ৫২৫টি গবাদিপশুর খামার এবং ১৫৩টি হাঁস-মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ১ হাজার ৭৩৪ মেট্রিক টন খড় নষ্ট হয়েছে। নষ্ট হওয়া খড়ের দাম ৮৪ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা। এর বাইরেও ২৫৮ মেট্রিক টন ঘাস বিনষ্ট হয়েছে। এসব ঘাস নষ্ট হওয়ায় ১২ লাখ ৯০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সিলেটের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রুস্তম আলী প্রথম আলোকে বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় পশু ও হাঁস-মুরগির মৃত্যু ঠেকাতে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে খামারিরা উপকৃত হয়েছেন। তবে পুরোপুরি বন্যার পানি না কমলে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যাবে না।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয় জানিয়েছে, আজ শুক্রবার জেলার সব কটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি ক্রমশ কমছে। নতুন করে পাহাড়ি ঢল কিংবা বৃষ্টিপাত না হলে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে।