সিনেমা হলের আদলে তৈরি পূজামণ্ডপ

রাজশাহীতে বিলুপ্ত সিনেমা হলের আদলে তৈরি করা হয়েছে পূজামণ্ডপ। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নগরের সাগরপাড়ায়
ছবি: প্রথম আলো

প্রদর্শনী শেষে যেভাবে সিনেমা হলের ভেতর থেকে স্রোতের মতো দর্শকেরা বের হয়ে আসেন, ঠিক সেভাবে দর্শক বের হচ্ছেন। গেটের ওপরে লেখা ‘কল্পনা সিনেমা।’ বাস্তবে এটি একটি পূজামণ্ডপ। রাজশাহী শহরে বর্তমানে একটিও সিনেমা হল নেই। সেই আক্ষেপ থেকে হারানো হলগুলোর স্মৃতি নিয়ে রাজশাহী নগরের সাগরপাড়া এলাকায় বানানো হয় এই পূজামণ্ডপ।

সিনেমা হলের মতোই পূজামণ্ডপের দেয়ালে লাগানো রয়েছে সিনেমার পোস্টার। তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম টিকিট কাউন্টার। গেটের ওপরে কয়েকটি বাক্যে প্রত্যাশা জানানো হয়েছে, রাজশাহীসহ সারা দেশ সিনেমা হলের শূন্যতা কাটিয়ে উঠুক।

রাজশাহী নগরের সাগরপাড়া এলাকার শিবালয় সাগরপাড়া শিবমন্দির পূজা উদ্‌যাপন কমিটি এর আয়োজন করেছে। পূজামণ্ডপটি সাজানো হয়েছে কল্পনা সিনেমা হলের আদলে। হলটি ২০১০ সালের দিকে ভেঙে ফেলা হয়। হল না থাকলেও রাজশাহী নগরের মানুষের কাছে এলাকাটির নাম এখনও ‘কল্পনার মোড়’।

শিবমন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক বাবু সরকার বললেন, ‘কল্পনা সিনেমা হলে ছোটবেলা থেকে আমরা অনেক সিনেমা দেখেছি। হলটি ভেঙে ফেলার সময় কর্তৃপক্ষ বলেছিল সেখানে একটি সিনেপ্লেক্স করা হবে। আজও তা করা হয়নি। সেই ক্ষুধা থেকেই এবার আমরা কল্পনা সিনেমা হলের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছি।’

এমনভাবে মণ্ডপটি তৈরি করা হয়েছে যে বাইরে থেকে মনে হচ্ছে, এটা ঠিক সিনেমা হল। গেটে নাম লেখা রয়েছে ‘কল্পনা হল। তার ওপর দিয়ে কয়েকটি বাক্যে সিনেমা হলের প্রত্যাশা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘চলচ্চিত্র শুধু বিনোদনের জন্য নয়, চলচ্চিত্র আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত। চলচ্চিত্র ধ্বংস হয়ে গেলে উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তি উৎসাহিত হবে। রাজশাহী শহরে বর্তমানে আমরা নেই। (কল্পনা, উৎসব, অলকা, স্মৃতি, রাজতিলক, লিলি, বর্ণালী, উপহার সিনেমা হল)। এই শূন্যতা কাটিয়ে উঠুক রাজশাহীসহ সারা দেশ। স্মৃতিতে কল্পনা সিনেমা হল।’

সিনেমা হলের মতো মণ্ডপের দেয়াল সাজানো হয়েছে বিভিন্ন সময় যে সিনেমাগুলো রাজশাহীর সিনেমা হলগুলোতে চলেছে সেসব পোস্টার দিয়ে। বেশির ভাগ পোস্টার আয়োজকেরা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন। কিছু পোস্টার ইন্টারনেট থেকে নামিয়েছেন। মণ্ডপের দেয়ালে শোভা পেয়েছে ‘রাজশাহী চলিতেছে ‘আগুনের পরশমনি’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘নিঃস্বার্থ’, ‘জবর দখল’ আর ‘আম্মাজান’। আর আসিতেছে ‘ভাই’, ‘ওয়াদা’ ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, সাদাকালো যুগের ‘মতিমহল’ ছবিসহ আরও কিছু ছবির পোস্টার।

পুরোনো ছবির মধ্যে রয়েছে খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’, চাষী নজরুল ইসলামের ‘ওরা ১১ জন’, আমজাদ হোসেনের ‘ভাত দে’ ছবির পোস্টার। সবচেয়ে ‘নতুন’ ছবির মধ্যে আছে গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘মনপুরা’।

গতকাল সন্ধ্যায় শিবালয়ের মণ্ডপে গিয়ে দেখা যায়, ভেতর থেকে স্রোতের মতো দর্শনার্থীরা বের হয়ে আসছেন। আবার একদল ভেতরে ঢুকছেন। দেখে মনে হচ্ছে সিনেমার একটি প্রদর্শনী শেষ হলো। আরেকটি শুরু হলো। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভিড় ঠেলে ভেতর থেকে বের হচ্ছিলেন মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামাণিক। এভাবে মণ্ডপ তৈরির প্রতিক্রিয়া বলেন, আগে ঈদে ও পূজার সময় নতুন নতুন সিনেমা মুক্তি পেত। হলে গিয়ে উৎসব উদ্‌যাপন করা হতো সেই সব সিনেমা দেখে। এখন আর সেই সুযোগ নেই। শহরে একটিও সিনেমা হল নেই। সেই প্রত্যাশার জায়গা থেকে এভাবে মণ্ডপ সাজানো হয়েছে।