সারা দেশে পাবনার ছানা
পাবনার ছানার কদর দেশজুড়ে। প্রতিদিন এ জেলার পাঁচটি উপজেলা থেকে প্রায় ২৫০ মণ ছানা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। আর তাতে তৈরি হচ্ছে নানা পদের মিষ্টি। ছোট থেকে শুরু করে অভিজাত দোকানের সুস্বাদু মিষ্টি তৈরিতে পাবনার ছানার জুড়ি নেই।
দেশের দুগ্ধভান্ডার বলে পরিচিত পাবনার পাঁচ উপজেলা—বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর। জেলার প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হিসাবে, এখানে ছোট-বড় প্রায় ২০ হাজার দুগ্ধ খামার রয়েছে। তা ছাড়া গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে গরু পালন করা হয়। সেখান থেকেও দুধ আসে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ লিটার দুধ উৎপাদিত হয়। এর ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে সরকারি মিল্ক ভিটা এবং বেসরকারি প্রাণ ডেইরি, আড়ং দুধ, ফার্ম ফ্রেস, অ্যামোমিল্ক, পিউরামিল্ক, আফতাব ডেইরি, রংপুর ডেইরিসহ বেশ কিছু দুগ্ধ সংগ্রহকারী ও প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন প্রায় ৫ লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করে থাকে। বাকি দুধ খুচরা এবং আশপাশের জেলার মিষ্টির দোকানগুলোতে বিক্রি হয়।।
স্থানীয় ঘোষেরা রোজ প্রায় ৬০ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করেন ছানা তৈরির জন্য। এ অঞ্চলে ছানার কারখানা রয়েছে প্রায় ১০০। তাতে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ মণ ছানা তৈরি হয়। কারিগরেরা জানান, এক মণ দুধে আট কেজির মতো ছানা পাওয়া যায়।
বেড়া উপজেলার সানিলা, পেঁচাকোলা, হাটুরিয়া, নাকালিয়া, সাঁথিয়া উপজেলার সোনাতলা, ডেমড়া, আমাইকোলা, সরিষা প্রভৃতি এলাকায় ছানা তৈরির অনেক ছোট-বড় কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে এক হাজারের বেশি লোকের। কারখানাগুলোতে উৎপাদিত ছানার মধ্য থেকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ মণ ছানা স্থানীয় মিষ্টির দোকানগুলোতে সরবরাহ করা হয়। বাকি প্রায় ২৫০ মণ ছানা প্লাস্টিকের বস্তায় করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়।
ছানা কারখানার মালিকেরা জানালেন, দুধের দামের সঙ্গে ছানার দাম ওঠানামা করে। কিছুদিন আগেও দুধের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা লিটার। তখন প্রতি কেজি ভালো মানের ছানার দাম ছিল ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা। এখন দুধের দাম কিছুটা চড়া। ছানার দামও কেজিতে প্রায় ১০ টাকা বেড়েছে।
তবে ননি (ক্রিম) তোলা দুধ থেকে তৈরি ছানা বিক্রি হয় ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে। এই ছানা দিয়ে তৈরি মিষ্টির স্বাদ কম। কম দামের মিষ্টির জন্য ননি তোলা দুধের ছানারও একধরনের চাহিদা রয়েছে। তবে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের অভিজাত মিষ্টির দোকানগুলো উৎকৃষ্ট মানের ছানাই নিয়ে থাকে।
বেড়া পৌর এলাকার সানিলা মহল্লার নির্মল ঘোষের ছানা তৈরির কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, তিনটি চুল্লিতে বড় ধরনের পাত্রে দুধ ফুটানো হচ্ছে। একপর্যায়ে ফুটানো দুধে পুরোনো ছানার পানি মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ছানা। নির্মল ঘোষ জানান, প্রতিদিন গড়ে ২৫ মণ ছানা তৈরি হয়। তাঁর কারিগর আছেন ১২ জন। এখানে ননি তোলা ছানা হয় না। ঢাকায় তাঁদের নির্ধারিত ক্রেতা আছে। উৎপাদনের পর পিকআপ ভ্যানে করে ঢাকায় পাঠানো হয়। লকডাউন উঠে যাওয়ার পর ছানার চাহিদা আবার বেড়েছে বলে জানালেন তিনি।